৫৭ হাজার কোটির প্রকল্পের আশ্বাস নিয়ে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে ভারতের দুই রাজ্যে প্রচারে প্রধানমন্ত্রী

৫৭ হাজার কোটির প্রকল্পের আশ্বাস নিয়ে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে ভারতের দুই রাজ্যে প্রচারে প্রধানমন্ত্রী

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে বুধবার ১৩ সেপ্টেম্বর সারা দিন পাঁচ রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কৌশল নিয়ে ম্যারাথন বৈঠকের পরদিন বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্য প্রদেশ ও ছত্তীসগড়ে প্রচার করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার দুই রাজ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঝটিকা সফরসূচিতে রয়েছে একাধিক সরকারি অনুষ্ঠান এবং দুটি জনসভা। নির্বাচনী প্রচারের কৌশল মেনেই প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুই রাজ্য মিলিয়ে মোট ৫৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করবেন।

প্রকল্প ঘোষণার সরকারি অনুষ্ঠানে মধ্য প্রদেশের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান উপস্থিত থাকবেন। তবে ছত্তীসগড়ে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের থাকা নিয়ে সংশয় আছে। গত অগাস্ট মাসে রাজস্থানে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বিরোধীদের আক্রমণ করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। মঞ্চে আসীন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তুতি থেকে স্পষ্ট পুরোদস্তুর নির্বাচনী প্রচারের লক্ষ্যেই তার বৃহস্পতিবারের এই সফর।

বিজেপি সূত্রের খবর, দুই রাজ্যেই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিজেপির কিছু প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে। গত মাসে ছত্তীসগড়, মধ্য প্রদেশের সঙ্গে রাজস্থানেরও একদফা প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে বিজেপি শিবির। কর্নাটক থেকে শিক্ষা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। গত মার্চে কর্নাটক বিধানসভার নির্বাচনে ভোটের আগে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দেওয়া যায়নি। টিকিট না পেয়ে দল ছাড়েন অনেক নেতা। বিজেপি পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে তাই আগেভাগে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে দিয়ে আগাম ক্ষোভ-বিক্ষোভ সামাল দিতে চাইছে, এমনই মত বিজেপির।

রাজস্থানে বুধবারই এক প্রবীণ বিজেপি নেতাকে বহিষ্কার করেছে দল। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ঘনিষ্ঠ ওই বিজেপি নেতা প্রার্থী তালিকা নিয়ে লাগাতার প্রশ্ন তুলছিলেন। উল্লেখ্য, রাজস্থানে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী গেহলট ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী শচীন পাইলটের বিবাদ এখন অনেকটাই মিটেছে। অন্যদিকে, মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপি শিবিরের অসন্তোষ। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটিতে বিজেপি প্রথম সারির পদাধিকারীদের রাখেনি।

মধ্য প্রদেশ নিয়ে বিজেপি এবার বেশি চিন্তিত। চার বারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে নিয়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঝড় বইছে। তার উপর কংগ্রেস সেখানে নরম হিন্দুত্বের অস্ত্রে বিজেপিকে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। হিন্দুত্ববাদী বহু সংগঠনও কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি আঁচ করে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজকেও দলের মুখ হিসাবে তুলে ধরছে না বিজেপি। পর্যবেক্ষরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সামনে রেখেই লড়বে দল, প্রবীণ শিবরাজের জন্য যা মোটেই সুখকর নয়।

ছত্তীসগড় নিয়ে প্রাক্ নির্বাচনী একাধিক সমীক্ষা রিপোর্টে কংগ্রেসের ভূপেশ বাঘেলের সরকারের প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত মিলেছে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস নেতা কমলনাথের মতোই ছত্তীসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বাঘেল উন্নয়নের পাশাপাশি নরম হিন্দুত্বের রাস্তায় হাঁটছেন যা বিজেপির জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই দুই রাজ্যে বিজেপির হিন্দুত্বের অস্ত্র সেভাবে কাজে আসবে না বলেই দল মনে করছে। স্বভাবতই পিছিয়ে থাকা ওই দুই রাজ্যে উন্নয়নকেই প্রচারের কৌশল করতে চলেছে দল। প্রধানমন্ত্রীর একদিনে ৫৭ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণার পরিকল্পনা সেই কৌশলেরই অঙ্গ।