বাংলাদেশের বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি ও অপ্রকাশিত উন্নয়ন সফলতার গল্প রয়েছে—ব্রিটিশ প্রধান অর্থনীতিবিদ

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়ের (এফসিডিও) অর্থনীতি ও মূল্যায়ন অধিদপ্তরের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও পরিচালক অধ্যাপক আদনান খান

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়ের (এফসিডিও) অর্থনীতি ও মূল্যায়ন অধিদপ্তরের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও পরিচালক অধ্যাপক আদনান খান বলেছেন, তারা বাংলাদেশকে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধির অপ্রকাশিত উন্নয়নের সফলতার গল্প বলে মনে করেন, যা সারা বিশ্বে প্রায়ই বলা হয় না।

আদনান খান বলেন, তিনি এটি একটি বড় অপ্রকাশিত উন্নয়নের সফলতার গল্প বলে মনে করেন। “এটি একটি অলৌকিক গল্প। তবে এটি এমন একটি গল্প যা প্রায়শই সারা বিশ্বে বলা হয় না। আমি আমার কর্মজীবনে যেখানেই ছিলাম, সেখানেই আমি বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধির গল্প বলেছি”।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে নিয়ুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের বাসভবনে ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

কর্মজীবনে উন্নয়ন অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, উদ্যোক্তা ও সরকারি খাতের সংস্কারের বোঝার দিকে মনোনিবেশ করেছেন আদনান খান। তিনি বলেছেন, তারা বাংলাদেশের অর্জনগুলোকে অন্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি দুর্দান্ত উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেন।

আদনান খান বলেন, “অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ বিস্ময়কর গল্পে পরিণত হয়েছে। এই ঘটনা কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে নয়, অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও প্রতিফলিত হয়েছে, তা আমরা সবাই জানি। মানব উন্নয়ন ও শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা অন্য মাত্রায় সহায়তা করে”।

আদনান খান বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া ও অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। যেমন—শিক্ষা, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুযোগ-সুবিধা।

হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের সাবেক শিক্ষক এবং স্কুল অফ পাবলিক পলিসির সাবেক একাডেমিক পরিচালক আদনান খান বলেছেন, বড় সাফল্য ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য নিজস্ব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।

তিনি বলেন, “এটি কেবল চ্যালেঞ্জ নয়, বিশাল সুযোগ নিয়ে আসে। তাই, আরও অগ্রগতির জন্য, নতুন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে”।

আরও অগ্রগতির জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার ওপর জোর দেন আদনান খান।

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন হবে। শুধু শিক্ষিত জনগণ নয়, ভবিষ্যতের অগ্রগতির জন্য একটি লক্ষ্যযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। কারা দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে এবং কাদের কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন তা দক্ষতার সঙ্গে চিহ্নিত করতে হবে।

আদনান খান বলেছেন, “দক্ষতার সঙ্গে এ কাজ সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জের পরবর্তী ধাপ। একইভাবে, তৈরি পোশাকের গল্পটি আমরা সবাই জানি। মূল্য শৃঙ্খল বৃদ্ধির সঙ্গে আরও অগ্রগতি করার সম্ভাবনা রয়েছে”।

তিনি বলেন, “সুতরাং, বাংলাদেশের যদি মালয়েশিয়া বা ভিয়েতনামে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও কিছু করতে হবে”।

আদনান খান বলেন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা মোকাবিলা করা প্রয়োজন। “সেই অর্থ সঠিক প্রকল্পে ব্যয় করার বিষয়েও চ্যালেঞ্জ থাকে, যাকে আমরা পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট বলি”।

আদনান খান বলেন, বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় কর ও জিডিপির অনুপাত জিডিপির ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোর গড় কর ও জিডিপি অনুপাত জিডিপির ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশে কর ও জিডিপির অনুপাত প্রায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, যা মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গড় ১০ দশমিক ৭ শতাংশের কম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে, তাই উচ্চমানের সরকারি সেবা প্রদানের জন্য উচ্চ পর্যায়ের রাজস্বের প্রয়োজন হবে। জনসেবা প্রদানে রাষ্ট্রের কার্যকারিতার মধ্যে কর ব্যবস্থার উন্নতির চাবিকাঠি রয়েছে।

আদনান খান বলেছেন, যে দেশগুলো অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহে ভালো করে, তাদের রাজস্ব ঘাটতি বা বাজেট ঘাটতির মুখোমুখি হতে হয় না। তাদের বাইরের সহায়তার ওপরও নির্ভর করতে হয় না। “সুতরাং এটি সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্যের জন্য ভালো। উচ্চ মানের সরকারি বিনিয়োগ, রাস্তা, সেতু, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ”।

বৈশ্বিক সংকটে বাংলাদেশ আক্রান্ত হলেও দেশটির এখনো বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন আদনান খান।

তিনি বলেন, “সুতরাং বাইরের পরিস্থিতি আরও কঠিন। যাই হোক, আমার মতে, সুযোগগুলো ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি”।

আদনান খান বলেন, সরকার চ্যালেঞ্জের প্রকৃতি উপলব্ধি করে এবং এটি খুবই উন্মুক্ত। “তারা জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে অন্য দেশ থেকেও শিখতে আগ্রহী”।

উন্নয়ন সহযোগীদের ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আদনান খান বলেন, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চাহিদাও পরিবর্তিত হচ্ছে, এ জন্য জোর দেওয়া হচ্ছে।

আদনান খান বলেন, “যে দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ করছে, সে দেশ ভালো করেছে। এর জন্য প্রত্যক্ষ আর্থিক সহায়তা কম প্রয়োজন এবং নীতিগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তার বেশি প্রয়োজন। কারণ সঠিক নীতি, সঠিক প্রতিষ্ঠান থাকলে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল বিশ্বের কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি হবে, যা প্রচুর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে”।

আদনান খান চলতি সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সঙ্গে পঞ্চম কৌশলগত সংলাপে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলেও ছিলেন।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি নতুন সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করার কথা ভাবছে।

তিনি অবশ্য এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৪০ কোটি (ইউএস) ডলারের রেকর্ড ভাঙা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং ২০২২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে সর্বোচ্চ ৫৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে (এফডিআই) সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

এ ছাড়া ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য।