বিবাহবিচ্ছেদের মামলার ক্ষেত্রে মহিলারা যদি নিজের সঠিক উপার্জন আদালতের কাছে পেশ না করেন, তাহলে তাদের খোরপোষ পাওয়ার অধিকার থাকবে না। এক মহিলার দায়ের করা বিবাহবিচ্ছেদের মামলার শুনানির ক্ষেত্রে এমনটাই জানাল ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট।
দিল্লি হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতির বিকাশ মহাজন তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, অভিযোগকারী মহিলা উচ্চশিক্ষিত এবং উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নিজের রোজগারের সঠিক অঙ্ক আদালতকে জানাননি। ওই মহিলা পারিবারিক আদালতের খোরপোষ সংক্রান্ত একটি রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
তার বিয়ে হয়েছিল ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল। কিন্তু বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই বনিবনা না হওয়ার কারণে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেছিলেন তার স্বামী। মহিলা আগে চাকুরিরতা হলেও ২০১৫ সালের ২২ মে সেই চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। যদিও পরবর্তীতে দম্পতি নিজেদের মনোমালিন্য মিটিয়ে ফেলেন এবং একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বিবাহবিচ্ছেদের মামলা প্রত্যাহার করে নেন তারা।
কিন্তু কিছু মাস পরে মহিলা পুলিশের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তার কয়েকদিনের মধ্যেই অভিযোগকারী মহিলার স্বামী ফের বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন। এরপরেই মাসে ৩৫ হাজার টাকা খোরপোষ চেয়ে বসেন ওই মহিলা।
সেই মামলার শুনানিতে আদালত তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, মহিলা বিবাহের সময় এমফিল ডিগ্রিধারী ছিলেন এবং তারপর তিনি ম্যানেজমেন্টে পিএইচডি করেছেন। কম্পিউটার সংক্রান্ত পেশাদারি জ্ঞান রয়েছে তার। যেখানে তিনি নিজে এতখানি উচ্চশিক্ষিতা, সেখানে তার স্বামী শুধুই একজন স্নাতক।
আদালত জানিয়েছে, "এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই যে একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র যোগ্য বলে তাকে কাজ করতেই হবে। কিন্তু এই মামলার ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকার পাশাপাশি আবেদনকারী কাজও করছেন। ‘যোগ্যতা’ এবং ‘প্রকৃত উপার্জন’-এর মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এটি এমন একটি মামলা যেখানে আবেদনকারী যে শুধুমাত্র যোগ্যতাসম্পন্ন তাই নয়, নথি থেকে স্পষ্ট যে তিনি কর্মরতা।"
বিচারপতি জানিয়েছেন, আবেদনকারী যে শুধুই উচ্চশিক্ষিতা এবং উপার্জন করতে সক্ষম, তাই নয়, তিনি প্রকৃতপক্ষেই উপার্জন করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তার আয়ের ব্যাপারে সঠিক তথ্য আদালতকে জানাননি।
"এমন একজন কোনওভাবেই খোরপোষ পাওয়ার অধিকারী নন। গার্হস্থ্য হিংসার বিরুদ্ধে নারীকে সুরক্ষা প্রদানের আইন অনুযায়ী আবেদনকারী যে খোরপোষের দাবি করেছেন, তার কোনও ভিত্তি নেই। তাই এই আবেদনও নিষ্প্রয়োজন," জানিয়েছে আদালত। এরপরেই অভিযোগকারী মহিলার খোরপোষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতি।