ভারতে ক্ষতিগ্রস্ত আখের ফলন, চিনি উৎপাদন কম, চিনির মূল্যবৃদ্ধি, রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, চড়া বহিঃশুল্কের আশঙ্কা

ভারতে ক্ষতিগ্রস্ত আখের ফলন, চিনি উৎপাদন কম, চিনির মূল্যবৃদ্ধি, রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা, চড়া বহিঃশুল্কের আশঙ্কা

ভারতে আখ উৎপাদনের মূল কেন্দ্র মহারাষ্ট্রে আখ চাষের জমি এ বছর খরায় শুকিয়ে গেছে। আখ উৎপাদন কমে গেলে স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়বে চিনি তৈরির উপরে।

সরকারের শিল্প দফতরের কর্তারাই সংবাদ সংস্থায় জানিয়েছেন, চলতি আর্থিক বছরে আখের ফলন কমার যে অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে, তাতে চিনি উৎপাদন ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। কোভিডের আগে ২০১৯ সালে এরকম পরিস্থিতি হয়েছিল। তার পর ফের সেই আশঙ্কা ঘনাচ্ছে।

গোটা ভারতেই অগাস্ট মাসে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কম। গত এক শতাব্দীতে অগাস্ট মাসে এত কম বৃষ্টি হয়নি। হিসাব মতো ৫৯ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই কম বৃষ্টিপাতের কারণে অন্যান্য কৃষিজ উৎপাদন কমার আশঙ্কাও রয়েছে।

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের উদ্বেগ হল, চিনির উৎপাদন কম হলে তার দাম বাজারে বাড়বে। কারণ, চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকবে। সেই পরিস্থিতি খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়লে মূদ্রস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। ইতিমধ্যে টমেটোর বাড়তি দামের কারণে মুদ্রাস্ফীতির চড়া হারের অভিজ্ঞতা সরকারের রয়েছে।

আবার এই পরিস্থিতি ঘরোয়া চিনি উৎপাদক সংস্থাগুলির মুনাফা বাড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বলরামপুর চিনি, দ্বারিকেশ সুগার, শ্রী রেনুকা সুগারস, ডালমিয়া ভারত সুগার ইত্যাদি। মুনাফা ভাল হলে ঠিক সময়ে তারা কৃষকদের টাকা মিটিয়েও দিতে পারবে।

বস্তুত গোটা দেশে চিনির যা চাহিদা তার সিংহভাগ পূরণ করে মহারাষ্ট্র। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সুগার মিল সংগঠনের প্রেসিডেন্ট বিবি থোম্বারে সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, গত আর্থিক বছরে তারা সাড়ে ১০ মিলিয়ন টন তথা ১০৫ কোটি টন চিনি উৎপাদন করেছিলেন। তার আগের বছর রেকর্ড ১৩৭ কোটি টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছিল। এবার তা কমে ৯০ কোটি টন হতে পারে। অর্থাৎ ১৫ কোটি টন উৎপাদন ঘাটতি হতে পারে চলতি আর্থিক বছরে।

থোম্বারে আরও জানিয়েছেন, “বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় সব জেলাতেই এবার আখের উৎপাদন কম হয়েছে। তারই প্রভাব পড়তে চলেছে উৎপাদনে।”

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি এমন আশঙ্কাজনক হলে চিনি রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে সরকার। বা চিনির উপর অতিরিক্ত হারে বহিঃশুল্ক চাপানো হতে পারে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, আর সাত মাস বাদে লোকসভা ভোট। তার ফলে এখন অত্যবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য নিয়ে কোনওরকম ঝুঁকি নেওয়ার অবস্থাতেই নেই কেন্দ্র। তাই সম্প্রতি পেঁয়াজ রফতানির উপর উচ্চ হারে বহিঃশুল্ক চাপানো হয়েছে। এবার সেই তালিকায় রয়েছে চিনি।