২০২৪-এ ভারতে লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশ থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হতে পারেন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে

২০২৪-এ ভারতে লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশ থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হতে পারেন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে আগামী বছর ২০২৪-এ ভারতে লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের কোনও আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। দলীয় সূত্রে খবর তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত কোনও আসন থেকে তাকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে । এই প্রস্তাব নিয়ে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের সভাপতি জয়ন্ত চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ভাবা হচ্ছে, খাড়্গে প্রার্থী হলে শুধু উত্তর প্রদেশ নয়, গোটা দেশেই লোকসভা ভোটের অঙ্ক বদলে যেতে পারে। কংগ্রেস সভাপতি দলিত অর্থাৎ তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। উত্তর প্রদেশে জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দলিত।

গো-বলয়ের ওই রাজ্যে দলিতরা দীর্ঘদিন কংগ্রেসের পাশে ছিল। বহুজন সমাজবাদী পার্টির উত্থানের পর দলিত ভোটের সিংহভাগ ওই আঞ্চলিক দলের দখলে চলে যায়। বস্তুত, দলিত ভোটারদের সমর্থনেই ২০০৭-এ বিএসপি নেত্রী মায়াবতী তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু বিএসপি-র ওই ভোট ব্যাঙ্কের সিংহভাগ এখন বিজেপির দখলে। কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়া জোটের অনেক নেতা মনে করছেন খাড়্গের মতো পরিচ্ছন্ন ইমেজের মানুষ প্রার্থী হলে গোটা দেশেই লাভবান হবে দল।

শুধু প্রার্থী করাই নয়, কংগ্রেস সূত্রের খবর, খাড়্গেকে লড়াইয়ে এগিয়ে দিয়ে দল বার্তা দিতে চায়, দল সরকার গড়ার সুযোগ পেলে এই দলিত প্রার্থীকেই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি এগিয়ে দেওয়া হবে। যদিও ইন্ডিয়া জোটের শর্ত অনুযায়ী কোনও দলই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে ভোটের আগে কোনও মন্তব্য করবে না। কংগ্রেস সেই শর্ত অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।

খাড়্গের রাজ্যের বাসিন্দা এইচডি দেবগৌড়ার পর নরেন্দ্র মোদী হলেন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি ওবিসি সম্প্রদায়ের । ৭৫ বছর পরও দেশে কোনও দলিত প্রধানমন্ত্রী হননি। দলিত কেআর নারায়ণন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। খাড়্গের বয়স এখন ৮৩ হলেও তিনি শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ-সবল। তাছাড়া, ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির নেতা মোরারজি দেশাই ৮৩ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, খাড়্গেকে নিয়ে কংগ্রেসের ভাবনার পিছনে শুধু দলিত পরিচয়ই একমাত্র অঙ্ক নয়। খাড়্গে তার ধর্ম পরিচয়কে সামনে না আনলেও তিনি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে একমাত্র শিখ মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কংগ্রেস সভাপতিকে প্রার্থী করা হলে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু ভোটও কংগ্রেসের দিকে ফিরতে পারে, আশা করছে দল। মুসলিম ভোট কংগ্রেসে ফেরার প্রবণতা ইতিমধ্যেই কর্নাটক ও হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভোটে স্পষ্ট হয়েছে।

খাড়্গে এর আগে তার রাজ্য কর্নাটক থেকে জিতে লোকসভার সাংসদ হয়েছেন। সদ্যই সেখানে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। খাড়্গের জন্য নিরাপদ আসন কর্নাটকেই বেশি। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের ধারণা কংগ্রেস দলীয় সভাপতির জন্য উত্তর প্রদেশের নিরাপদ আসন খুঁজছে দুটি কারণে। এক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাণসীর সাংসদ। তাছাড়া, দেশে পরিবর্তনের হাওয়া তুলতে হলে উত্তর প্রদেশ হল সবচেয়ে উপযুক্ত রাজ্য। গো-বলয়ে ভাল ফল করতে না পারলে দিল্লির কুর্সি দখল করা কঠিন। তাই বিজেপির বিরুদ্ধে জোরদার লড়াইয়ের বার্তা দিতেও কংগ্রেস সভাপতিকে দেশের সবচেয়ে বেশি লোকসভা আসনের রাজ্যে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে।

জল্পনা চলছে, কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী অসুস্থতার কারণে ২০২৪-এ রায়বেরলি কেন্দ্র থেকে আর প্রার্থী হবেন না। ২০১৯-এ উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র সনিয়াই জিতেছেন। অনেকেই মনে করছেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী বর্তমান সভাপতিকে রায়বেরলি আসন ছেড়ে দিতে পারেন। সেখানে প্রায় ১৫ শতাংশ তফসিলি ভোট আছে। এছাড়া প্রায় ২৫ শতাংশ মুসলিম।

আলোচনা শোনা যাচ্ছে, মায়ের আসন থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রার্থী হতে পারেন। বস্তুত প্রচারের কারণে রায়বেরলি এবং আমেঠিকে হাতের তালুর মতো চেনেন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেস হাইকমান্ডকে লিখিত প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে, রাজ্যের চিকমাগালুর আসন থেকে প্রার্থী করা হোক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। উল্লেখ্য, কর্নাটকের চিকমাগালুর আসনে জিতে কংগ্রেসি রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।

তবে রাহুল গান্ধীর আর আমেঠি থেকে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। গত নির্বাচনে বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজিত হন রাহুল। এবার সেখানে প্রার্থী হওয়ার আর্জি জানিয়েছেন সদ্য উত্তর প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসা অজয় রাই। বারাণসীর বাসিন্দা অজয় জাতিতে ব্রাহ্মণ। খাড়্গেকে প্রার্থী করে কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর দলিত-ব্রাহ্মণ ভোটের সমীকরণ নিয়ে এগোচ্ছে, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।