খার্তুমে ড্রোন হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত, বললেন চিকিৎসকরা

সুদানের রাজধানী খার্তুমে দেশটির সেনাবাহিনী এবং আধা-সামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এক বিমান বোমা হামলার পর ভবনগুলির উপরে ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়। ১ মে, ২০২৩। (ফাইল ছবি)

সুদানের সেনাবাহিনী এবং তাদের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী আধাসামরিক গোষ্ঠী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের মধ্যে দেশটির নিয়ন্ত্রণের জন্য চলমান যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কর্মী এবং একটি মেডিকেল গ্রুপ জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী খার্তুমের দক্ষিণে একটি খোলা বাজারে রবিবার এক ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছে।

সুদান ডক্টরস ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, খার্তুমের মে এলাকার আশেপাশে হামলায় আরও ৫৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছে, যেখানে সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি, যুদ্ধরত আধাসামরিক বাহিনী ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা হয়েছিল। আহতদের চিকিৎসার জন্য বাশাইর বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

মানবিক সহায়তা সংগঠিত করতে সাহায্যকারী একটি কর্মী গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স কমিটি, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করেছে, যাতে দেখা যায় হাসপাতালের সামনে খোলা উঠানে সাদা চাদরে মোড়ানো মৃতদেহগুলো পড়ে আছে।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ বুরহানের নেতৃত্বে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বে আধা-সামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই শুরু হলে, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে সহিংসতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সুদান।

আরএসএফ রবিবারের হামলার জন্য সামরিক বাহিনীর বিমান হামলাকে দায়ী করেছে, যদিও অবিলম্বে নিরপেক্ষভাবে দাবিটি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, সামরিক বাহিনী আরএসএফের অভিযোগকে "মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর দাবি" হিসাবে বর্ণনা করে, রবিবার বিকেলে বলেছে, তারা বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করেনি।

সুদানের যুদ্ধে উভয় পক্ষের নির্বিচারে গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলা অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বৃহত্তর খার্তুম এলাকা একটি ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

এরপর থেকে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে, গত সপ্তাহান্তে উত্তর দারফুর প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী আল-ফাশারে আরএসএফ একটি সামরিক স্থাপনায় হামলা করলে, আবারও ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়।

সুদানে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী ক্লেমেন্টাইন এনকভেটা-সালামি আল-ফাশারের সংঘর্ষের বিষয়ে রবিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক্স (পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত)-এ লেখা এক বার্তায় জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা যুদ্ধরত দলগুলিকে লড়াই বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন "যাতে করে মানবতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি অভাবীদের কাছে প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ এবং আশ্রয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে পারে।"

জাতিসংঘের অগাস্টের পরিসংখ্যান অনুসারে, যুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪,০০০ এর বেশি লোক নিহত হয়েছে। তবে, চিকিৎসক ও কর্মীরা বলছেন, প্রকৃত সংখ্যা প্রায় নিশ্চিতভাবেই আরও অনেক বেশি।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা অনুসারে, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির সংখ্যা এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে কমপক্ষে ৭১ লাখে পৌঁছেছে। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুসারে, আরও ১১ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলিতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে।

জাতিসংঘ এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলি অনুসারে, চাদ প্রায় ৪৬৫,০০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যদের বেশিরভাগই পশ্চিম দারফুর প্রদেশ থেকে এসেছে। যেখানে আরএসএফ এবং আরব মিলিশিয়ারা প্রাদেশিক রাজধানী জেনেনা এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে অ-আরব উপজাতিদের উপর প্রাণঘাতী আক্রমণ শুরু করেছিল।