মানুষ টিকে থাকতে পারে কেবল পারস্পরিক সহযোগিতায়: জি-২০ সম্মেলনে শেখ হাসিনা

নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে (ইসিসি) অনুষ্ঠিত জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, “পারস্পরিক সহযোগিতা মানবজাতি ও পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একমাত্র মাধ্যম।” নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানের ভারত মণ্ডপম কনভেনশন সেন্টারে (ইসিসি) অনুষ্ঠিত জি-২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে, ‘ওয়ান আর্থ’ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “বাস্তবতা হলো, মানুষ ও আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমে টিকে থাকতে পারে।” বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই, যা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরের অর্থায়নের জন্য সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, “এই শীর্ষ সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কোভিড-১৯ মহামারী এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জর্জরিত। এই চ্যালেঞ্জগুলো, সমস্ত মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়নের জন্য, এক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করাকে অপরিহার্য করে তুলেছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ খুব নগণ্য ভূমিকা রাখলেও, এর পরিণতির শিকার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশেটি। অতএব সবুজ ও টেকসই উন্নয়নের প্রতি লক্ষ্য রেখে, আমাদের সব উন্নয়ন প্রচেষ্টা চলছে। এখন, আমরা সার্কুলার ইকোনমি’র (উপকরণ বা পণ্যের পুনঃব্যবহার ও পুনঃউৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা) পথও বেছে নিচ্ছি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পরিবেশ সচেতন অনুশীলন প্রচারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর চালু করা জীবনযাত্রার প্রচারকে সমর্থন করে।”

বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “যদিও বাংলাদেশে প্রশমনের সুযোগ খুব কম, তবুও আমরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবেলায় অনেক রূপান্তরমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কনফারেন্স অন ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিডিআরআই)-এর জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ এই প্ল্যাটফর্মে যোগ দেয়। শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশকে জলবায়ু সমৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে স্থিতিস্থাপকতার দিকে নিয়ে যেতে আমরা মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা চালু করেছি। আমাদের সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিস্থাপক ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “২০২২ সালে আমার সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৩০০০ কোটি ডলারের প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থনের আহ্বান জানাই।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “সব মানুষেরই সুস্থ জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। বিশ্ব সম্প্রদায় দুর্ভাগ্যজনকভাবে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।”
“আমরা আমাদের পৃথিবীকে শক্তিশালী করতে এবং বাঁচাতে, জি-২০ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। আমাদের একে অপরের এবং আমাদের মা পৃথিবীর যত্ন নেয়ার জন্য নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করতে হবে;” বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।