ভারতের উত্তর-পূর্বে মণিপুরে সেনা ব্যারিকেড ভাঙার ডাক মেইতেই মহিলাদের, ৫ জেলায় পূর্ণাঙ্গ কার্ফু জারি, আশঙ্কা সংঘর্ষের

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন বিচলিত। সন্ধ্যার পর কার্ফু জারি হতেই অন্ধকার থেকে গুলি যুদ্ধ শুরু হয় কুকি ও মেইতেইদের। গত সপ্তাহে গুলি যুদ্ধে তিন দিনে আটজন নিহত হন।

ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে আবার নতুন করে বড় ধরনের অশান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত মে মাস থেকে সেখানে অবিরাম কুকি ও মেইতেই জনজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে।

কো-অর্ডিনেশন কমিটি অন মণিপুর ইনটিগ্রিটি বা কোকোমি, ইম্ফল উপত্যকা এবং পার্বত্য মণিপুরের মাঝামাঝি এলাকায় থাকা সেনা ব্যরিকেড ভাঙার ডাক দিয়েছে। মূলত কোকোমি-র মহিলা শাখা এই অভিযানের ডাক দেয়।

এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মণিপুর সরকার উপত্যকা এবং পার্বত্য মণিপুরের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত পাঁচটি জেলায় বুধবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্ফু জারি করেছে। রাজ্যের অন্যত্র সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল থাকে। ওই পাঁচ জেলায় কার্ফু সকাল থেকে বহাল রাখার কথা মঙ্গলবার ৫ অগাস্ট ভারতীয় সময় গভীর রাতে আচমকাই ঘোষণা করে মণিপুরের রাজ্য সরকার।

এই পাঁচ জেলা হল বিষ্ণুপুর, ককচিং, থাইবল এবং ইম্ফল ওয়েস্ট ও ইম্ফল ইস্ট। কোকোমি হল এই মুহূর্তে মণিপুরে মেইতেইদের সবচেয়ে বৃহৎ এবং শক্তিশালী সংগঠন। মেইতেই মহিলাদের সংগঠন মীরা পাইবি-র নেতৃত্বও কোকোমির সঙ্গে যুক্ত হয়ে কুকিদের মোকাবিলা করে চলেছে। তাদের বক্তব্য, সেনা-আধা সেনার ব্যারাক থাকায় তারা পার্বত্য মণিপুরে ফেলে আসা বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না। ৩ মে কুকিদের আক্রমণের জেরে তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়। সেনা ব্যারাক তুলে না নিলে তারা সেগুলি ভেঙে দেবেন।

মণিপুরে সব সম্প্রদায়েই মহিলারা প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। কোকোমিতে মেইতেই ছাত্র-যুবসহ সমাজের সব অংশের সংগঠন শামিল হলেও সেনা ব্যারাক ভাঙার ডাক দিয়েছেন মহিলারা। প্রশাসন মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে মানুষকে গৃহবন্দি করে রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যানবাহন এবং লোকজনের চলাচল চালু রাখা হয়েছে। বুধবার ভারতীয় সময় সকাল থেকে আচমকা কার্ফু জারি হওয়ায় পাঁচ জেলার পথঘাট শুনশান।

তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন বিচলিত। সন্ধ্যার পর কার্ফু জারি হতেই অন্ধকার থেকে গুলি যুদ্ধ শুরু হয় কুকি ও মেইতেইদের। গত সপ্তাহে গুলি যুদ্ধে তিন দিনে আটজন নিহত হন। বেশ কয়েকটি থানাও আক্রমণ করা হয়েছে। অসম রাইফেলসের এক কর্তা এই পরিস্থিতিকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন গত সপ্তাহে।

পার্বত্য মণিপুরে মূলত কুকিদের বাস। তবে বিক্ষিপ্তভাবে মেইতেই বসতি ছিল সেখানে। অন্যদিকে, ইম্ফল উপত্যকায় বাস মূলত মেইতেইদের। সেখানেও বিক্ষিপ্ত কুকি বসতি ছিল। কিন্তু সংঘর্ষ শুরুর পর পাহাড় ছাড়তে হয় মেইতেইদের। অন্যদিকে, কুকিরা উপত্যকা ছেড়ে পালান। এখন মধ্যবর্তী এলাকায় বাফার জোন তৈরি করে দু-পক্ষকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু যে কোনও সময় এক পক্ষ আর এক পক্ষের উপর হামলা করতে পারে আশঙ্কা প্রশাসনের।