মহাকাশে পৌঁছে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর সৌরযান আদিত্য এল-১। ইসরো জানিয়েছে, পৃথিবীর প্রথম কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে দ্বিতীয় কক্ষে পা রেখেছে আদিত্য। এখন ২৮২X৪০২২৫ কিমি কক্ষপথে পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে সে। রবিবার ৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটে ইসরো প্রথম আর্থ-বাউন্ড ফায়ারিং করেছে। সৌরযানটি পৃথিবীর প্রথম কক্ষপথ ছেড়ে দ্বিতীয় কক্ষপথে প্রবেশ করেছে। ১ হাজার ৪৮০ কিলোগ্রাম ওজনের মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণের পর সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে ইসরো। আদিত্য এল-১ সৌরযানও চন্দ্রযান-৩ এর মতো পৃথিবীর চারপাশে ঘুরবে এবং তারপরে সূর্যের পথে এগিয়ে যাবে।
ব্যবহার করা হচ্ছে পিএসএলভি রকেট। এখানে কোনও সলিড বুস্টার নেই। আদিত্য এল-১ স্পেসক্রাফ্টে ব্যবহার করা হয়েছে সেকেন্ড স্টেজ হাই প্রেসার লোয়ার থ্রাস্ট বিকাশ ইঞ্জিন।
সূর্য অভিযানের আসল উদ্দেশ্য হল সূর্যের সবচেয়ে উত্তপ্ত অঞ্চল সোলার করোনাকে বোঝা। সূর্য থেকে আগুনে সৌররশ্মিরা কীভাবে ও কোন পথে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে তা গবেষণা করে দেখা। সূর্যের শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের খোঁজ করতেও পাঠানো হয়েছে আদিত্য এল-১ সৌরযানকে।
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের পপর্যবেক্ষণ সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রে বিশাল পরিমাণ শক্তি রয়েছে। মাঝে মাঝে সেখানে বিকট বিস্ফোরণ হয় ঠিক পরমাণু বোমা ফাটার মতো। সেই শক্তি বেরিয়ে আসে যাকে বলে ‘করোনাল মাস ইঞ্জেকশন।’ প্রচণ্ড গতির সৌরকণা ও সৌরঝড় পৃথিবীর উপর দিয়েও বয়ে যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু বাধা দেয় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র(ম্যাগনেটোস্ফিয়ার)। এটাই পৃথিবীর সুরক্ষা কবচ। সৌরযান সূর্যের এই চৌম্বক ক্ষেত্রকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করবে।
আদিত্য এল-১ মিশনের এই ‘এল-১’ পয়েন্ট হল ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট। পৃথিবী ও সূর্যের মাঝামাঝি এই পয়েন্টে গিয়ে পৃথিবী ও সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য আসে। এখানে গেলে স্পেসক্রাফট খুব কম জ্বালানিতে দীর্ঘসময় স্থির হয়ে থাকতে পারে। আর ওই পয়েন্ট থেকে সূর্যকে কাছ থেকে দেখা সম্ভব। এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট এমন এক মধ্যবর্তী জায়গা যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর আকর্ষণ সরাসরি পড়বে না স্পেসক্রাফ্ট-এ। ফলে সেটি সূর্যের দিকে এগিয়ে যাবে না আবার পৃথিবীর দিকে পিছিয়েও আসবে না। সূর্যের গনগন আগুনে তেজ কোনও ক্ষতি করতে পারবে না স্পেসক্রাফ্ট-এর। সে স্থির হয়ে বসে সূর্যের ছবি তুলবে, সূর্যের করোনার খবর পাঠাবে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে।