জি-২০ সম্মেলনের মাঝেই ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মোদী-হাসিনা বৈঠকে অন্যতম বিষয় হতে চলেছে তিস্তা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বছর খানেক আগেই ভারত সফরে এসেছিলেন। এবার আসছেন মূলত জি-২০ ভুক্ত দেশগুলির সম্মেলনে যোগ দিতে। (ফাইল ছবি)

জি-২০ দেশগুলির শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আগামী সপ্তাহে ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার ৩ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে, আগামী শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া ওই সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিনজন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, মাকরঁ দিল্লি সফর শেষ করে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে যাবেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বছর খানেক আগেই ভারত সফরে এসেছিলেন। এবার আসছেন মূলত জি-২০ ভুক্ত দেশগুলির সম্মেলনে যোগ দিতে।

বাংলাদেশ এই জোটের সদস্য নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের নিকট বন্ধু হিসাবে কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তাদের অন্যতম। গত এক বছর যাবৎ জি-২০ সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনাতেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নয়া দিল্লি।

রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ের সঙ্গে তিস্তার জল নিয়েও কথা হবে। বাংলাদেশের এজেন্ডায় তিস্তা থাকছে, জানিয়েছেন সে দেশের পররাষ্ট্রসচিব।

প্রসঙ্গত, ১০ বছরের বেশি হয়ে গেল উত্তরবঙ্গের এই নদীর জল বাংলাদেশকে দেওয়া নিয়ে চুক্তি সম্পাদন আটকে আছে। ২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা নিয়ে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে রাজি হননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, "রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে চুক্তি করা হচ্ছে। এরফলে উত্তরবঙ্গের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বেন।"

মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিকে মর্যাদা দিয়ে সেই সফরে তিস্তা চুক্তি করা হয়নি। তবে বাংলাদেশকে জল দেওয়া হবে না, এমন কথা ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কখনই বলা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন থেকেও বার্তা দেওয়া হয়েছে, তিস্তায় জলের প্রবাহ বাড়লে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবস্থান পর্যালোচনা করবে। সংবাদ সূত্রের খবর, কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিয়মিত বৈঠকে তিস্তা, গঙ্গা-সহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান নদীগুলির জলের পরিমাণ নিয়ে তথ্য বিনিময় হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানান, তিস্তার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী হাসিনা আসন্ন ভারত সফরে গঙ্গার জল বণ্টন নিয়েও আলোচনা চান। ১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে নতুন করে গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬-এ। ফলে ওই চুক্তি পুনর্নবীকরণের বিষয়টি ঢাকার অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে।

এখন থেকে আলোচনা শুরু না করা গেলে ২০২৬-এ চুক্তির মেয়াদ শেষের আগে সিদ্ধান্ত করা কঠিন হবে, মনে করছে হাসিনা সরকার। উল্লেখ্য ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত নদীর সংখ্যা ৫৪। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব জানান, তিস্তা, গঙ্গা-সহ ৫৪টি নদীর জলের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে নিরন্তর আলোচনা চলে।