মঙ্গলবার ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের ছয় রাজ্যের সাতটি বিধানসভায় উপনির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হবে। এরমধ্যে তিনটি আসনে আগের বার বিজেপি জিতেছিল। বাকি চারটিতে বিরোধীরা।
এই ছয় রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও উত্তরাখণ্ডে বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বাকি চারটি আসনে ইন্ডিয়া জোটের শরিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করছে বিজেপির বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ ওই চার আসনের লড়াইকে বিজেপির এনডিএ এবং বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের অগ্নি পরীক্ষা হিসাবেই দেখছে। বিরোধীদের জোট গঠনের পর এই প্রথম দেশে কোথাও ভোট হতে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের ধূপগুড়ি আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে বিজেপির বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুতে। উপনির্বাচনে বিজেপি সেখানে প্রার্থী করেছে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলায় নিহত জনন্নাথ রায়ের স্ত্রী তাপসী রায়কে।
সেখানে লড়াইয়ে আছে তৃণমূল এবং বাম-কংগ্রেসের প্রার্থীরাও। তৃণমূল প্রার্থী করেছে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মুখ নির্মলচন্দ্র রায়কে। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী লোকসঙ্গীত গায়ক ঈশ্বরচন্দ্র রায়। পর্যবেক্ষকদের মতে ত্রিমুখী লড়াইয়ে হার-জিতের ফল কী হবে বলা মুশকিল। তিন শিবিরই জোরদার প্রচার করছে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ হল, মুম্বইয়ে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক থেকে ফিরে ধূপগুড়িতে প্রচারে গিয়ে বাম -কংগ্রেসকে আক্রমণ করেননি তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লড়াই হচ্ছে উত্তর প্রদেশের ঘোসি আসনে। সেখানে বিজেপির প্রার্থী দারা সিং চৌহান দেড় বছর আগে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে জিতেছিলেন। কিন্তু এসপি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবেব সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে তিনি দল ছাড়েন। বিধায়ক পদ থেকেও ইস্তফা দেন। তিনিই উপনির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী। সমাজবাদী পার্টি প্রার্থী করেছে সুধাকর সিংহকে। সেখানে কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। তারা সমর্থন করছে সমাজবাদী পার্টিকে। ইন্ডিয়া জোটে না থাকলেও প্রার্থী দেয়নি মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টিও। ফলে ওই আসনে বিজেপির সঙ্গে জোর লড়াই হচ্ছে ইন্ডিয়া জোটের।
আবার ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক কংগ্রেস ও সিপিএমের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে কেরলের পুথুপল্লি আসনে। কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত ওমেন চাণ্ডী ওই আসন থেকে ৫০ বছর বিধায়ক ছিলেন। কংগ্রেস সেখানে প্রার্থী করেছে ওমেন চন্ডীর ছেলেকে। সিপিএমের প্রার্থী দলের এক যুব নেতা। তৃতীয় প্রার্থী বিজেপির। তবে বাম-কংগ্রেসের লড়াইয়ের জেরে সেখানে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনা কম।
উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বেরের লড়াই আবার ভিন্ন। কংগ্রেস উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে ঘোসি আসনে প্রার্থী না দিলেও উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বরে দুই দলের লড়াই হচ্ছে। ওই আসনের বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে উপনির্বাচন হচ্ছে। সেখানে ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম দুই শরিক কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির লড়াইয়ে বিজেপির জয়ের রাস্তা সহজ হয়ে গিয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
ত্রিপুরায় উপনির্বাচন হচ্ছে দুটি আসনে। বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির ফলে সেখানে তৃণমূল প্রার্থী দেয়নি। অন্যদিকে তিপ্রা মথা প্রার্থী দেয়নি। কোনও দলকে তারা সমর্থনও করবে না বলে জানিয়েছে। তবে, তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোৎ কিশোর মাণিক্য দেববর্মণের সঙ্গে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বৈঠকের পর বিজেপি দাবি করছে আঞ্চলিক দলটির ভোট তারা পাবে। একই দাবি বাম-কংগ্রেসেরও।
আবার ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী হিসাবেই ঝাড়খণ্ডের একটি আসনে লড়াই করছেন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী। কংগ্রেস, আরজেডি সমর্থন করছে জেএমএম প্রার্থীকে। রাজনৈতিক মহলের মত, সব মিলিয়ে মঙ্গলবার দেশের সাত বিধানসভার উপ নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।