দেয়ালেগুলো একেবারে শূন্য, ফাঁকা পড়েআছে এবং আসবাবপত্রগুলো এলোমেলো হয়েছিল । এই কিছুদিন আগে---ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে পূর্ব জেরুজালেমের যে অ্যাপার্টমেন্টটি চমৎকারভাবে সাজানো গোছানো একটি বাড়ি ছিল যেখানে জালাবানি পরিবারের সদস্যরা নীল রঙ্গের সোফায় বসে তাসের আসর বসাতেন এবং প্রচুর মশলাযুক্ত ভাতের সঙ্গে মুরগির স্টু দিয়ে খাবার খেতেন। তা এখন বিলীন হয়ে গিয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ১৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ জালাবানি শুয়াফাত ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি চৌকিতে শরণার্থী শিবিরের একটি বাসে ইসরাইলি এক পুলিশ কর্মকর্তার উপরে রান্না ঘরের একটি ছুরি দিয়ে হামলা চালায়। এই ঘটনার একদিন আগে শেষবারের মত ফিলিস্তিনি পরিবারটির সবাই তাদের বাড়িতে একসঙ্গে মিলে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। তাদের ঐ বাড়ীটি খুব শীঘ্রই বিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করা হবে। গত সপ্তাহে ইসরাইলের সুপ্রিম কোর্ট ঐ ইসরাইলি পরিবারের আবেদন খারিজ করে দেয় এবং তৃতীয় তলার নতুন অ্যাপার্টমেন্টটি ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ পরিবারটি প্রায় তিন বছর ধরে সেখানে বসবাস করছিল।
বৃহস্পতিবার বাড়ী ভেঙ্গে ফেলার কর্মীরা পরিবারটিকে জানিয়ে যান যে কয়েক দিনের মধ্যে অ্যাপার্টমেন্টটিতে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে।
এই পরিবারের বিষয়টিকে অধিকার গোষ্ঠীগুলো আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যার বিষয় বলে অভিহিত করেছে এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ফিলিস্তিনি হামলাকারীদের বসত-বাড়ি ভেঙে ফেলার ইসরাইলের বিতর্কিত প্রথার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। পূর্ব জেরুজালেম এবং অধিকৃত পশ্চিম তটে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইলের উগ্র ডানপন্থী সরকার আরও আগ্রাসীভাবে এই নীতি অনুসরণ করছে। আক্রমণ কমানোর উপায় হিসেবে সরকার এই ধরণের পদক্ষেপ অনুশীলন করে থাকে।
"মোহাম্মদের মা ফিদা জালাবানি বলেন, “এটা কোনো সমাধান নয়” তিনি অশ্রুসজল নয়নে বাড়িটি সাজিয়ে-গুছিয়ে নেয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী বাড়িটি ভাংচুর করেছে এবং সেখানে বোমা ফেলার জন্য দেয়ালে দেয়ালে গর্ত খুঁড়েছে। আমার সন্তানরা, পাড়ার লোকজন এটি প্রত্যক্ষ করবে এবং তারা কখনও তা ভুলবেনা।”
ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে ইসরাইলিপুলিশ মোহাম্মদের এক বন্ধুর কাছে নকল বন্দুক দেখে তাকে ভুলবশত গুলি করে হত্যা করে। ঐ ঘটনাটি দেখার দুই সপ্তাহ পর মোহাম্মদ এক ইসরাইলি পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাতের চেষ্টা করে। ঐ কর্মকর্তাকেরক্ষাকারী এক বেসরকারী রক্ষী তরুণহামলাকারীর দিকে গুলি চালায় কিন্তুদুর্ঘটনাক্রমে ঐ গুলিতে তারই সহকর্মী নিহতহয়।
মোহাম্মদ এখন কিশোর সংশোধনী সেন্টারে আটক রয়েছে। হত্যার অভিযোগে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে।
জালাবানীদের পক্ষে পিটিশন দায়েরকারী লিগ্যাল এইড গ্রুপ হামোকেডের মতো মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা বাড়ি ধ্বংসকরে দেওয়াকে সম্মিলিত শাস্তি হিসাবে বর্ণনা করেছে। যার ফলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় --- বাবা-মা, ভাইবোন এবং স্বামী-স্ত্রী গৃহহারা হয়ে পড়েন। সাত সদস্যের জালাবানি পরিবার সাময়িকভাবে একটি সংকীর্ণ বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে আছেন।
পশ্চিমা সরকার এবং জাতিসংঘ এই কৌশলের নিন্দা জানিয়েছে। এই কৌশলটি ইসরাইলি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও বিভাজনের বীজবপন করেছে। কিছু জেনারেল এবং বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে কৌশলটি বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।