পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে মঙ্গলবার ২৯ অগাস্ট রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দপ্তর নবান্ন-এ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সর্বদল বৈঠকে যোগ দিল না জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী ২৮টি দলের ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক সিপিএম এবং কংগ্রেস। বিজেপি যে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবে না, মুখ্যমন্ত্রীকে তা চিঠি দিয়ে আগেই জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তবে সিপিএম, কংগ্রেসের অনুপস্থিতি নিয়ে এদিনের সর্বদলে দুঃখপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি ইন্ডিয়া জোটে আছি এবং সব ব্যাপারে যাই। কংগ্রেস ও সিপিএমের বৈঠকে যোগ না দেওয়াটা দুঃখজনক।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, "আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করার হয়তো দরকার পড়ত না। কিন্তু বিজেপি ২০ জুনকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করার চক্রান্ত করছে। ওই দিনটায় বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। তাই দুঃখের দিনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হতে পারে না। ভুলটা ঠিক না করলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই এই সর্বদলের আয়োজন।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ডাকা সর্বদল বৈঠকে এসইউসিআই, সিপিআই লিবারেশন, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা সহ একাধিক রাজনৈতিক দল হাজির হয়েছিল। বৈঠকে হাজির ছিলেন ইতিহাসবিদ, সাহিত্যিক সহ সমাজের বিশিষ্টজনেদের একাংশ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের পাশাপাশি রাজ্যের জন্য নিজস্ব একটি রাজ্য সঙ্গীত রচনা নিয়েও আলোচনা হয়।
সংবাদ সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারের একটা বড় অংশ চাইছেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত পয়লা বৈশাখকেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করতে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনদের সিংহভাগও ১ বৈশাখকেই মান্যতা দিয়েছেন। কবি জয় গোস্বামীর কথায়, “পয়লা বৈশাখের সঙ্গে জড়়িয়ে রয়েছে বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতি। বাংলার আবেগও।” একই মত সাহিত্যিক আবুল বাশারের। তার কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের মতো বাঙালি প্রধান রাজ্যে বাংলা ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব আজও অসীম। সেদিক থেকে পয়লা বৈশাখের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।”
কিছুটা ভিন্ন সুর শুনিয়েছেন ইতিহাসবিদ নৃসিংহ ভাদুড়ি। তার কথায়, “১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর শ্রাবণী পূর্ণিমার দিন রাখী বন্ধন পালন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। দুই বাংলা সাদরে কবিগুরুর এই অনুষ্ঠান মেনে নিয়েছিল। তাই বঙ্গভঙ্গের স্মৃতি হিসেবে আমরা পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে রাখীর দিনটাকে বেছে নিতে পারি।” ইতিহাসবিদ সুগত বসু আবার মনে করেন অগাস্টেরই কোনও একটা দিনকে বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে। তার মতে, “অগাস্টে যেহেতু দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং ১৯ অগাস্ট রবীন্দ্রনাথ ও নেতাজি কলকাতায় যৌথভাবে মহাজাতির কথা বলেছিলেন, তাই ১৯ অগাস্টকেও আমরা বেছে নিতে পারি।”
এসইউসিআইয়ের তরফে অমিতাভ চট্টোপাধ্যায় বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ১২ ডিসেম্বরের উল্লেখ করেছেন। সিপিআই লিবারেশন অবশ্য তাদের মত জানাতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অতিরিক্ত তিন দিন সময় চেয়ে নিয়েছেন। অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা, কামতাপুরি অ্যাকাডেমি, মাইনরিটি কমিশন, রাজ্য মহিলা কমিশন, শিশু সুরক্ষা কমিশন, রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজরা অবশ্য মনে করেন, বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পয়লা বৈশাখের বিকল্প কিছু হতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী জানান, খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমেই পশ্চিমবঙ্গ দিবস নির্ধারণ করা হবে।