ভারতে এমবিবিএস-এর পাঠক্রম থেকে রেসপিরেটরি মেডিসিন, ইমার্জেন্সি ও ফিজিকাল মেডিসিনের সিলেবাস বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে সংবাদ সখবর। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলের নতুন নীতিতে এমবিবিএস-এর সিলেবাস থেকে এই তিনটি বিষয় বাদ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
ডাক্তারির পঠনপাঠনে রেসপিরেটরি ও ইমার্জেন্সি মেডিসিনের পাঠ খুবই জরুরি। দু’বছর আগেও হাসপাতালগুলিতে ইমার্জেন্সি মেডিসিন পরিষেবা চালু করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। বিশেষ করে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ইমার্জেন্সি মেডিসিন বিভাগের পরিষেবা পুরোপুরি চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সঙ্কটাপন্ন রোগীর জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করার জন্য ইমার্জেন্সি মেডিসিনের জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। সেই সঙ্গেই শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা ও ফিজিকাল মেডিসিনের বিভাগ থাকলে জরুরি অবস্থায় রোগীর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়।
এমবিবিএস-এর পাঠক্রম থেকে এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই বাদ দেওয়া হবে বলে খবর প্রকাশ হলে তা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
২০২০ সালে জাতীয় কমিশন তাদের নির্দেশিকায় জানিয়েছিল, এমবিবিএস-এ ২৪টি বিষয় পড়াতেই হবে। এ বছরের নতুন পাঠক্রমেও তাই বলা হয়েছে কিন্তু ইমার্জেন্সি, রেসপিরেটরি মেডিসিন এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন–এই তিনটি বিষয় বাদ পড়েছে। নতুন নির্দেশিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কীভাবে প্রাথমিকের তিনটি পাঠ না নিয়েই একজন স্বয়ংসম্পূর্ণ ডাক্তার হওয়া যায় সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চিকিৎসকদের নানা সংগঠন।
ইন্ডিয়ান চেস্ট সোসাইটি ও ফিজিক্যাল মেডিসিনের চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ‘ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, "দেশজুড়ে দূষণের মাত্রা সাঙ্ঘাতিক। দেশের বহু মানুষ ভুগছেন সিওপিডি-তে। তাছাড়া কোভিডের সময় থেকেই শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণা ভালভাবেই টের পেয়েছেন দেশের মানুষ। যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যাও কম নেই দেশে। নানা ধরনের ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তে ফুসফুসের রোগ বাড়ছে। কাজেই রেসপিরেটরি মেডিসিনের জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি। নতুন ডাক্তাররা যদি সেই পাঠই না পান, তাহলে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করবেন কীভাবে!"
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হৃদ্রোগে আক্রান্ত, প্রবল শ্বাসকষ্ট, স্ট্রোকে আক্রান্ত বা অন্যান্য জটিল সমস্যার রোগীদের অধিকাংশ সময়েই জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালের সাধারণ ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসেন পরিজনেরা। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করার পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগে স্থানান্তরিত করেন। সেখানে যাওয়ার পরে রোগীর নির্দিষ্ট রোগ বা সমস্যার জরুরি চিকিৎসা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় অনেকটা সময় নষ্ট হয়। অনেক সময়ে রোগীর প্রাণসংশয়ও তৈরি হয়। যদিও জরুরি বিভাগে এলে সব রোগীকে প্রথমে স্থিতিশীল করতে হবে বলেই সরকারের নির্দেশিকা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ইমার্জেন্সি মেডিসিনের পাঠ থাকা খুব জরুরি ডাক্তারদের। স্পেশালিস্টের কাছে যাওয়ার আগে রোগীর প্রাণ বাঁচানো দরকার।
চিকিৎসকদের সংগঠন দাবি করছেন, জেনেবুঝেই স্পেশালিস্ট নির্ভর চিকিৎসার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। এরপরে ফ্যামিলি ফিজিসিয়ান বা জেনারেল ফিজিসিয়ান বলে কিছু থাকবে না। হঠাৎ করে বিপদ এলে কী ব্যবস্থা হবে সেটা ভেবেচিন্তে দেখা উচিত।