ভারতের ছত্তীশগড়ের ভূপেশ বাঘেল-এর পর রাজস্থানের অশোক গেহলট। কংগ্রেসের ছত্তীসগড় ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তব্য, ২০২৪-এ রাহুল গান্ধীই প্রধানমন্ত্রী মুখ।
ছত্তীসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল-এর বক্তব্য, "রাহুলই জোটের মুখ। তাকেই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরা হবে।" অন্যদিকে, অন্য কৌশলে গেহলট দাবি করেছেন, "কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রী মুখ রাহুল গান্ধী।" তার আরও দাবি, "ইন্ডিয়া জোটের সব দল মিলে এমন সিদ্ধান্ত করেছেন।"
আগামী ৩১ অগাস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বসছে বিজেপি বিরোধী ২৮টি দলের ইন্ডিয়া জোটের পরবর্তী বৈঠক। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে ওই বৈঠকে জোটের লোগো এবং স্লোগান আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া অভিন্ন কর্মসূচি এবং যৌথ আন্দোলনের বিষয়েও কথা হবে। আসন ভাগবাটোয়ারা, জোট ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা প্রধান এজেন্ডা হিসাবে নেই।
প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে গত মাসে বেঙ্গালুরুর বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে প্রারম্ভিক ভাষণেই দলের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলেন। "কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য আগ্রহী নয়", বলেন খাড়্গে। তিনি জানান, "দলের একমাত্র লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতাচ্যুত করা।" ওই বৈঠকের আয়োজক ছিল কংগ্রেসই।
শুধু খাড়্গেই নন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমাররাও বলে আসছেন, বিরোধী জোট কাউকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরবে না। ভোটের পর সরকার গড়ার সুযোগ এলে তখন আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী।
এই বোঝাপড়ার মাঝে পর পর দু’দিন কংগ্রেসের দুই মুখ্যমন্ত্রী কেন রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে দাবি করে বসলেন তা নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে তুমুল শোরগোল শুরু হয়েছে। কংগ্রেসে শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া হঠাৎ দুই মুখ্যমন্ত্রী প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরবেন, তা কারও কাছেই বিশ্বাসযোগ্য ঠেকছে না।
এমনিতে কয়েকটি শরিক দল নিজেদের নেতার নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে প্রস্তাব করে চলেছে গোড়া থেকে। যেমন নীতীশ কুমার নিজে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হতে চান না বললেও তার দল, জনতা দল ইউনাইটেড ঘরোয়া আলোচনায় উল্টো কথা বলছে। যদিও নীতীশের পার্টি প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে কোনও কথা বলেনি।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি ঘরোয়া বৈঠকে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পরামর্শ দেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করার কথা বলেই পশ্চিমবঙ্গে দলকে ভোট চাইতে হবে। তবেই বাংলায় সিংহভাগ আসন এই দলের দখলে আসতে পারে। কিন্তু দল হিসাবে তৃণমূল প্রকাশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করার কথা ইন্ডিয়া জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই বলা বন্ধ করে দিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, জোটের বৈঠকের মাত্র কয়েক দিন আগে কেন কংগ্রেসের দুই মুখ্যমন্ত্রী দলীয় সভাপতির উল্টো সুরে প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে মুখ খুলেছেন এবং এটাই কংগ্রেসের কৌশলে রাহুলকে জোটের মুখ করার পরিকল্পনা কি না, তাই নিয়ে। গোটাটাই পরিষ্কার হতে পারে মুম্বইয়ের বৈঠকে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, নীতীশ কুমাররা কী বলেন তার উপর সব কিছু নির্ভর করবে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি হওয়া দুটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এখনও ভারতে বেশিরভাগ মানুষ নরেন্দ্র মোদীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পেতে চান। দ্বিতীয় পছন্দ রাহুল গান্ধী। আগের তুলনায় এই ব্যাপারে রাহুলের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা বেড়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ পছন্দের নেতারা রাহুলের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে।