ভারত সিদ্ধ চালে ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরাপ করল

বাসমতী বাদে অন্যান্য আতপ চালের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সিদ্ধ চালের উপর নজর পড়ে রপ্তানিকারকদের।

বাসমতী বাদে অন্য চাল রপ্তানি মাস খানেক আগেই নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। এবার আলাদা করে সিদ্ধ চালের উপর ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক চাপাল ভারতের কেন্দ্র সরকার। দেশে চালের জোগান স্বাভাবিক রাখতে এই সিদ্ধান্ত বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে।

দিন পনেরো আগে ভারত সরকার পেঁয়াজের উপর ৪০ শতাংশ রফতানি শুল্ক চাপিয়েছে। তাতে দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পেঁয়াজ উৎপাদনকারী প্রধান রাজ্য মহারাষ্ট্রের চাষিরা এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হন। তারা কোল্ড স্টোরেজ থেকে পেঁয়াজ বের করা বন্ধ করে দিয়েছেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার চড়া দরে কৃষকদের কাছ থেকে দু’লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুল্ক চাপিয়ে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে লাগাম দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ছাড়াও ইওরোপ, যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের পেঁয়াজের উপর নির্ভর করে গোটা ইওরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র। বাসমতী বাদে অন্য চাল রপ্তানিতে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় পশ্চিমের বহু দেশেই বাজারে হাহাকার শুরু হয়েছে। ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরেই দোকানে ছোটেন মানুষ। বিভিন্ন দেশ অনুরোধ করা সত্ত্বেও ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি।

শুক্রবার জয়পুরে জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রীদের সম্মেলনে ভারতের পীযূষ গয়ালের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি। তিনি পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরেন পীযূষ গয়ালের কাছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, চলতি সমস্যা মিটে গেলেই পেঁয়াজ রপ্তানি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ভারত থেকে বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার একটি প্রক্রিয়া প্রণয়নের কাজ চলছে দুই দেশের মধ্যে। বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী সেই প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী তাতে সম্মত হয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার অংশ হল চাল-চিনি-নুন-তেলের মতো বেশ কিছু নিত্যপণ্য বাংলাদেশকে নিয়মিত রপ্তানি করবে ভারত।

তবে রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের খবর, আগামী বছর লোকসভা ভোটের মুখে দেশে মূল্যবৃদ্ধিজনিত সমস্যা মোদী সরকারকে চিন্তায় রেখেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন শুক্রবার ২৫ অগাস্ট একটি সরকারি অনুষ্ঠানে বলেছেন, জিনিসপত্রের দামের উপর তার সর্বক্ষণ নজর রয়েছে। কেন্দ্রের খাদ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, উৎসবের মরসুমের চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে ভারত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে চিনি রপ্তানি বন্ধ করে দিতে চলেছে।

সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, বাসমতী বাদে অন্যান্য আতপ চালের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর সিদ্ধ চালের উপর নজর পড়ে রপ্তানিকারকদের। ইতিমধ্যে বিপুল পরিমান সিদ্ধ চাল রপ্তানির অর্ডার নিয়েছেন রপ্তানিকারকেরা। তাই ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক চাপানো হয়েছে। মুম্বইয়ের এক চাল রপ্তানিকারক সংস্থার কর্তার কথায়, এরফলে সিদ্ধ চাল রপ্তানিতে যে খরচ হবে সেই টাকায় থাইল্যান্ড ও পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করা যাবে।

যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই সিদ্ধান্তে ইওরোপ নতুন করে বিপাকে পড়তে চলেছে। চাল রপ্তানিকারক দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম। গত বছর ভারত ৭৭ লাখ মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করে। এবার সেই পরিমান অর্ধেকেরও কম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের বাজারে চালের জোগান এবং দাম স্বাভাবিক রাখতেই এই সিদ্ধান্ত।