ভারতের মহারাষ্ট্রে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক অব্যাহত: শরদ-অজিত বিবাদে নতুন সংযোজন সুপ্রিয়া

ভারতের মহারাষ্ট্রে রাজ্য রাজনীতিতে বিতর্ক অব্যাহত: শরদ-অজিত বিবাদে নতুন সংযোজন সুপ্রিয়া

ভারতে মহারাষ্ট্রে এনসিপি-বিজেপি সম্পর্ক নিয়ে আবার উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। বরাবরের মতো এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার যেমন আছেন, এবার নতুন করে জল্পনা এবার উসকে দিয়েছেন তার মেয়ে সুপ্রিয়া সুলহে। এনসিপি-র সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি সুপ্রিয়া সুলহে বৃহস্পতিবার বলেন, "কে বলল অজিত পাওয়ার এনসিপি-তে নেই? উনি অবশ্যই দলে আছেন। উনি আমাদের নেতা। এনসিপি-তে ভাঙন ধরেছে বলে যা বলা হচ্ছে, সবটাই ভিত্তিহীন প্রচার।"

শরদ-কন্যার এমন মন্তব্যে শোরগোল থামার আগেই তাতে শিলমোহর দিয়েছেন স্বয়ং শরদ পাওয়ার। বলেছেন, "সুপ্রিয়া ঠিকই বলেছে।" আর পাওয়ারের এই ঘোষণায় এনসিপি-র অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী রীতিমতো পথে নেমে উল্লাশ শুরু করেছে। চলে মিষ্টি বিনিময়। উল্লসিত বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজে মুগ্ধ স্বয়ং শরদ পাওয়ারও। তার বিজেপি জোটের হাত ধরা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

অন্যদিকে, বিরোধী জোট মহা বিকাশ আগারির অপর দুই শরিক কংগ্রেস এবং শিবসেনার (উদ্ধব গোষ্ঠী) নেতারা এই ঘটনা পরম্পরায় কার্যত দিশেহারা। ছয়দিনের মাথায় মুম্বইয়ে বসতে চলেছে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৈঠক। তার আগে মহারাষ্ট্রে সেই জোটের শরিক এনসিপি-র ঘরোয়া বিবাদ এবং পাওয়ারের বক্তব্য নিয়ে বিরক্ত অপর দুই শরিক, এমনই মত পর্যবেক্ষকদের। যদিও প্রকাশ্যে দুই দলের রাজ্য নেতারা কেউ শরদ সম্পর্কে বিরক্তি প্রকাশ করেননি।

শিবসেনা-বিজেপি সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী, শরদের ভাইপো অজিত পাওয়ার নিজে মুখ না খুললেও তার শিবির থেকে বলা হয়, "সুপ্রিয়া সঠিক কথাই বলেছেন। এনসিপি অক্ষত। আমাদের নেতা শরদ-অজিত-সুপ্রিয়া।"

বৃহস্পতিবার ২৪ অগাস্ট দিনভর তার বক্তব্য নিয়ে তুমুল রাজনৈতিক জল্পনা চললেও কথা ফিরিয়ে নেননি সুপ্রিয়া। শুক্রবার সকালে তার কথায় নয়া মাত্রা যোগ করেন বাবা শরদ পাওয়ার। শুক্রবার সকালে শরদ পুণের অদূরে বারামতীর গ্রামের বাড়িতে যান। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তাকে ঘিরে ধরে সুপ্রিয়ার বক্তব্য নিয়ে। এনসিপি সুপ্রিমো সেখানে বলেন, "সুপ্রিয়া সঠিক কথাই বলেছেন। দলের কথাই বলেছেন। অজিত পাওয়ার অবশ্যই এনসিপি-তে আছেন। তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা।" সেই সঙ্গে শরদ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, "কেন বলা হচ্ছে এনসিপি-তে স্প্লিট হয়েছে? ভাঙনের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।"

তবে কয়েক ঘণ্টা পর সাতারা জেলায় এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে শরদ পাওয়ার পুরো ডিগবাজি খান। বলেন, "অজিত পাওয়ার এনসিপি-তে আছে, এমন কথা আমি বলিনি। ওকে আমরা তাড়িয়ে দিয়েছি।" শরদের এই কথাতেও ফের শোরগোল শুরু হয়ে যায়।

এনসিপি-র নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিরোধী জোট মহা বিকাশ আগারির দুই শরিক কংগ্রেস ও শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) এমনকী বিজেপিও বোঝার চেষ্টা করছে, মারাঠা ‘স্ট্রং ম্যান’ কেন বারেবারে বিপরীত কথা বলছেন। কেউ কেউ বলছেন, বয়সের কারণে শরদের স্মৃতির সমস্যা হচ্ছে। তার খেয়াল থাকছে না কখন কী বলছেন।

তবে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং শরদ পাওয়ারকে যারা চেনেন, তাদের অনেকেই মনে করছেন, এটা আসলে শরদের চাল। একেক সময় একের কথা বলে তিনি গোটা বিতর্কটা গুলিয়ে দিতে চাইছেন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে না তিনি ইন্ডিয়া জোটে থাকছেন নাকি থাকছেন না।

২ জুলাই এনসিপি-র আট বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে শরদের ভাইপো অজিত রাজ্যের শিবসেনা-বিজেপি সরকারে যোগ দিয়েছেন। শপথ অনুষ্ঠানের পর গোটা বিষয়টি জানাজানি হয়। শরদ দাবি করেন, তিনি কিছুই জানতেন না। দলের বৈঠক ডেকে অজিত পাওয়ার-সহ আট বিধায়ককে বহিষ্কার করার পাশাপাশি বিধানসভার স্পিকারকেও চিঠি দেন সদস্য পদ খারিজ চেয়ে।

কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা যায়, ভাইপোর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করছেন শরদ। পুণেতে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাকা-ভাইপোর গোপন বৈঠক ঘিরে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়।

অজিতকে নিয়ে সুপ্রিয়া ও শরদের বক্তব্য ঘিরে বিরোধী জোটের দুই শরিক কংগ্রেস ও শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী) প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও সংবাদ সূত্রের খবর, একান্তে নেতারা বলছেন, অজিত পাওয়ার কোনও কিছুই কাকাকে না জানিয়ে করেন না। অজিতের মন্ত্রিসভায় যোগদান পাওয়ারের জ্ঞাতসারেই হয়েছে। আসলে তিনি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। ভাইপোকে বিজেপি শিবিরে পাঠিয়ে রেখেছেন। যাতে দিল্লিতে মোদী সরকার ফের ক্ষমতাসীন হলে তার কোনও সমস্যা না হয়।

বিজেপি শরদ পাওয়ার ও তার মেয়ের কথায় খুশি। মহারাষ্ট্র বিজেপির সভাপতি চন্দ্রশেখর বাওয়ানকুলের বক্তব্য, "আমরা জানি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাজকর্মে শরদ পাওয়ার মুগ্ধ। অজিতের মতো তিনি ও তার মেয়ের আমাদের হাত ধরা সময়ের অপেক্ষা।"