চাঁদের মাটিতে ভারতের চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম-এর ভেতর থেকে বেরোল রোভার প্রজ্ঞান। চাঁদ থেকে সেই ভিডিও পাঠিয়ে খবর দিয়েছে ল্যান্ডার বিক্রম। রোভার-এর পাওয়ার কর্ড বিক্রম-এর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। গড়িয়ে গড়িয়ে নেমে ছয় চাকায় এখন চাঁদের মাটিতে হেঁটেচলে বেড়াচ্ছে প্রজ্ঞান।
ইসরো জানিয়েছে, ল্যান্ডার বিক্রম-এর চারটি পেলোড রম্ভা, চ্যাস্ট, ইলসা ও অ্যারে কাজ করা শুরু করেছে। ডানা মেলেছে বিক্রম ও প্রজ্ঞান-এর সোলার প্যানেল। প্রোপালসন মডিউলের শেপ পেলোডও সক্রিয় হয়েছে।
শেপ পেলোড হল স্পেকট্রো পোলারিমেট্রি অব হ্যাবিটেবল প্ল্যানেট আর্থ। এটি ল্যান্ডারের সঙ্গে যুক্ত আছে। এর কাজ হল মাটির কম্পন পরীক্ষা করা। চাঁদের ঘূর্ণনের প্রকৃতি বোঝা। চাঁদ থেকে পরীক্ষা করা পৃথিবীর ঘূর্ণনের প্রকৃতি ও কৌণিক অবস্থান। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই পেলোডের।
রম্ভা হল রেডিও অ্যানাটমি অব মুন বাউন্ড হাইপারসেনসিটিভ আয়নোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমস্ফিয়ার। এর কাজ হল চাঁদের মাটিতে প্লাজমার ঘনত্ব বোঝা এবং আয়নিত কণা বা ইলেকট্রিন পার্টিকল পরীক্ষা করা। কীভাবে চাঁদের মাটিতে আয়নিত কণাগুলির নিরন্তর বদল ঘটছে তা পরীক্ষা করবে এই পেলোড। সেই কাজ শুরু হয়ে গেছে।
চ্যাস্ট পেলোড সক্রিয় হয়েছে। এর কাজ হল চাঁদের মেরু অঞ্চলের তাপমাত্রার প্রকৃতি নির্ধারণ করা। মূলত চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, তাপমাত্রার বদল, থার্মাল কন্ডাক্টিভিটি পরীক্ষা করাই এর কাজ।
ইলসা হল ইনস্ট্রুমেন্ট ফর লুনার সিসমিক অ্যাকটিভিটি পেলোড। এর কাজও গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদের মাটির কম্পন পরীক্ষা করছে এই পেলোড। চাঁদের মাটিও ভূমিকম্পপ্রবণ। এই পেলোড পরীক্ষা করবে চাঁদের মাটিতে কীভাবে কম্পন হয়, কতক্ষণ ধরে তা চলে এবং অবশ্যই সেই কম্পনের মধ্যে পড়লে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান-এর কোনও ক্ষতি হবে কিনা।
লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে সংযুক্ত রয়েছে ল্যান্ডারের সঙ্গে। এটি চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন উপাদান ও তাদের প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য করবে। একটি আরেকটির থেকে কতটা দূরত্বে রয়েছে সে পরিমাপও করবে। এর সঙ্গেই মূলত ল্যান্ডার হ্যাজার্ড ডিটেকশন ক্যামেরা যুক্ত আছে যা চাঁদের চারপাশ দেখতে সাহায্য করবে ল্যান্ডারকে।
রোভারের সঙ্গে যুক্ত আছে আলফা পার্টিকল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (APXS) এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (LIBS)।
এই দুই স্পেকট্রোস্কোপের কাজ হল চাঁদের মাটিতে খনিজের খোঁজ করা। চাঁদের মাটিতে কোথায় ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, টাইটানিয়াম ও লোহা মিশে আছে তা খুঁজে বেরতে প্রজ্ঞানকে সাহায্য করবে এই দুই স্পেকট্রোমিটার।
এইসব কাজের পাশাপাশি চাঁদের মাটিতে ভারতের জাতীয় পতাকা, ইসরোর প্রতীক চিহ্ন ও অশোকস্তম্ভ খোদাই করবে রোভার। তার চাকায় খোদাই করা অশোকস্তম্ভ ও ইসরোর লোগোর ছাপ পড়তে শুরু করেছে চাঁদের মাটিতে।