সফল চন্দ্রাভিযানের পর এবার ভারতের মহাকাশভিযানের পরের পর্ব মিশন রবি। সূর্য-অভিযানে যাবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। সূর্যের দেশে যাবে মহাকাশযান আদিত্য-এল ১। সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শুক্র গ্রহেও অভিযান চালাবে ইসরো। গগনযানে চেপে চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়ার বড়সড় পরিকল্পনাও আছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার। সেই কাজও চলছে।
চাঁদের পরে ইসরোর ‘সোলার মিশন’ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। কারণ নাসা আর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা ‘এসা’) পর ভারতই প্রথম পাড়ি দিচ্ছে সৌর-মুলুকে। এ বছরই সূর্য অভিযানে যাওয়ার কথা ইসরো-র। এই অভিযান সফল হলে, মহাকাশবিজ্ঞানের ইতিহাসে পাকাপাকি ভাবে সেরার শিরোপা পাবে ভারত। ইসরো জানিয়েছে, পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝের এক কক্ষপথ ‘ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট’ বা ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট’-এ ল্যান্ড করবে স্যাটেলাইট আদিত্য এল-১। সূর্যের বাইরের সবচেয়ে উত্তপ্ত স্তর করোনার যাবতীয় তথ্য সে তুলে দেবে আমাদের হাতে। এই সোলার-মিশন তাই সবদিক দিয়েই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সূর্যের সবচেয়ে রহস্যময় স্তর ‘সোলার করোনা’-র খবর আনতেই যাবে আদিত্য এল-১। সূর্যের বহিস্তরের তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি কেলভিন, নিম্নস্তরের প্রায় ৬০০০ কেলভিন। সূর্যের পৃষ্ঠদেশে ও করোনার তাপমাত্রার ফারাক এবং করোনা থেকে ছিটকে আসা আগুনে রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কী ভাবে প্রভাব ফেলে সেটাই খুঁজে বার করবে আদিত্য এল-১। তার জন্য এই উপগ্রহে রয়েছে সাতটি সায়েন্স পে-লোড।
সৌরঝড় (সোলার স্টর্ম)-এর স্যাটেলাইটগুলো আক্রান্ত হয় ও টেলি যোগাযোগে বড় ব্যাঘাত ঘটায়। পাশাপাশি, বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্যও দায়ী এই সৌরবায়ু, সৌরঝড় এবং সৌর বিকিরণ। এই সৌরঝড় কোন পথে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ছে পারে তার খোঁজ চালাবে আতিত্য এল-১।
২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে নাসার যমজ মিশন হবে শুক্রে । একটি দ্য ভিঞ্চি, শক্র গ্রহের আবহাওয়া, পরিবেশ, মাটি, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব মাপবে। বাতাসে কী গ্যাস আছে, মাটিতে কত খনিজ, তার পরিমাণ করবে। দ্বিতীয় মিশন, ভেরিটাস, শুক্র গ্রহের অজানা রহস্যের কথা সামনে আনবে। তবে শোনা যাচ্ছে, নাসার আগেই নাকি শুক্র গ্রহে মহাকাশযান পাঠিয়ে দিতে পারে ইসরো।
শুক্রে পাড়ি দেওয়ার জন্য ইসরো তৈরি করছে শুক্রযান। শোনা গিয়েছিল, শুক্রযানের প্রযুক্তি ও তার যন্ত্রপাতির কিছুটা অংশ তৈরি করছে ফরাসি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা রসকসমস এবং কিছুটা সুইডেনের আইআরএফ। শুক্রযানের জন্য ‘ভেনুসিয়ান নিউট্রাল অ্যানালাইজার’ তৈরি করেছে আইআরএফ। এই যন্ত্রের কাজ হল সূর্য থেকে ছিটকে আসা সৌরকণার উপর নজর রাখা। কীভাবে মহাজাগতিক রশ্মি ও সৌরকণারা শুক্রের পরিমণ্ডলে ঢুকে পড়ে সেটা নির্ণয় করবে ভিএনএ।
ইসরো জানিয়েছে, মোট ১০০ কেজি ওজনের যন্ত্রাংশ নিয়ে এই মহাকাশযান শুক্র অভিযান শুরু করবে। শুক্র গ্রহের সঙ্গে এই মহাকাশযানের ন্যূনতম দূরত্ব হবে ৫০০ কিলোমিটার, আর সর্বাধিক দূরত্ব হবে প্রায় ৬০০০০ কিলোমিটার। শুক্র গ্রহের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পাক খাবে এই মহাকাশযান। নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা করবে। এই মহাকাশযানে থাকবে ভেনাস এল অ্যান্ড এস-ব্যান্ড এসএআর, ভারটিস (হাই ফ্রিকুয়েন্সি রেডার), ভিটিসি থার্মাল ক্যামেরা, লাইটনিং সেন্সর, সোলার অকুলেশন ফোটোমেট্রি, এয়ারগ্লো ইমেজার, মাস স্পেকট্রোমিটার, প্লাজমা অ্যানালাইজ়ার, রেডিয়েশন এনভায়রনমেন্ট, সোলার সফট এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার, প্লাজমা ওয়েভ ডিটেকটর ইত্যাদি।