তেলের ট্যাংকারের প্রতি ইরানের হুমকি মোকাবেলায় উপসাগরীয় অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

হরমুজ প্রণালীতে একটি বড় কন্টেইনার জাহাজের সামনে দুটি ঐতিহ্যবাহী ধোও জাহাজ দেখা যাচ্ছে। ১৯ মে, ২০২৩। (ফাইল ছবি)

উপসাগরীয় এলাকায় ইরানের জব্দ করার ভয়ে তেল ট্যাংকারগুলি হুমকির মুখে থাকায়, ওই এলাকায় সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলির দীর্ঘদিন ধরে দাবি করা প্রেক্ষিতে নেয়া একটি পদক্ষেপ, যারা ওয়াশিংটনকে এই অঞ্চল থেকে পিছু হটার বিষয়ে অভিযুক্ত করে আসছিল৷

ইতোমধ্যে সৈন্য অবতরণকারী একটি যুদ্ধজাহাজ তিন হাজার অতিরিক্ত আমেরিকান সৈন্য নিয়ে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে গেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামুদ্রিক বাহিনী ইরানের জলসীমার কাছে যাওয়ার বিরুদ্ধে জাহাজগুলোকে সতর্ক করছে।

ওমান উপসাগর এবং আরব সাগরের ইউ-আকৃতির প্রবেশদ্বার হরমুজ প্রণালীতে এবং এর আশেপাশে জাহাজগুলিকে আটক করার কিংবা করার চেষ্টা রুখে দিতে এই পদক্ষেপগুলি নেয়া হচ্ছে। বিশ্বের তেল উৎপাদনের এক পঞ্চমাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে বহন করা হয়।

আমেরিকান নৌবাহিনীর পঞ্চম নৌবহরের মুখপাত্র কমান্ডার টিম হকিন্স বলেছেন, হরমুজ প্রণালীতে আঞ্চলিক নাবিকদের জন্য ইরান “একটি বড় রকম হুমকি, এবং ওই এলাকা জাহাজ আটক হওয়ার ক্ষেত্রে একটি উচ্চতর ঝুঁকিতে রয়েছে৷

বাহরাইনের আমেরিকান নৌ ঘাঁটিতে বার্তা সংস্থা এএফপিকে হকিন্স বলেন, "এই মুহূর্তে, আমাদের সমস্ত মনোযোগ... একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জলপথে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং হরমুজ প্রণালী ও এর আশেপাশে আমাদের উপস্থিতি বাড়ানোর দিকে।"

ওয়াশিংটন এবং এর ধনী উপসাগরীয় মিত্রদেশ গুলোর মধ্যে অস্থির সম্পর্কের সময়ে ট্যাঙ্কারগুলির উপর হামলা করা হয়েছিল, মিত্রদেশ গুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের তেল সম্পদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষার উপর নির্ভর করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বলেছে, ইরান গত দুই বছরে এই অঞ্চলে প্রায় ২০টি আন্তর্জাতিক পতাকাবাহী জাহাজ আটক করেছে বা করার চেষ্টা করেছে।

অতি সম্প্রতি, ওয়াশিংটন বলেছে, তাদের বাহিনী গত ৫ জুলাই ওমানের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইরানের বাণিজ্যিক ট্যাঙ্কার আটক করার দুটি প্রচেষ্টাকে রুখে দেয়। এর আগে, এপ্রিল এবং মে মাসের শুরুতে, আঞ্চলিক জলসীমায় এক সপ্তাহের ব্যাবধানে দুটি ট্যাঙ্কার আটক করে ইরান।

শনিবার, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি নৌ জোট বাণিজ্যিক জাহাজগুলির জন্য ইরানের জলসীমা থেকে "যতদূর সম্ভব" নোঙ্গর করার জন্য একটি পরামর্শ জারি করেছে। যেটিকে হকিন্স সাম্প্রতিক জাহাজ আটকের আলোকে একটি "বিচক্ষণ পদক্ষেপ" বলে অভিহিত করেছেন।

ওয়াশিংটন ওই এলাকায় যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিল, তারা সেখানে এ-টেন ওয়ারথগ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।

ওয়াশিংটনের উপসাগরীয় মিত্ররা, বৈশ্বিক বাজারে তাদের তেল সরবরাহ করার জন্য শিপিং লেনের উপর নির্ভরশীল। তারা, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির জোরদার দাবি জানিয়ে আসছে, বিশেষ করে ২০১৯ সাল থেকে ইরানের দ্বারা জাহাজ বাজেয়াপ্ত হওয়ার পর থেকে সেই দাবী আরও জোরালো হয়।

কন্ট্রোল রিস্ক কনসালটেন্সির সহযোগী বিশ্লেষক দিনা আরাকজি যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত এই উপস্থিতিকে কেবল "ভঙ্গি পরিবর্তন" বলে অভিহিত করেছেন।

আরাকজি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য সম্ভবত উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোকে এই বলে আশ্বস্ত করা যে, ওয়াশিংটন এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ"।