মেঘ ভাঙা বৃষ্টি-ভূমিধসে বিধ্বস্ত হিমাচল প্রদেশ, বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা

রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত মিলিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও।

প্রকৃতির রোষ যেন কমছে না উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশে। একই সঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, একজোড়া মৌসুমি অক্ষরেখা এবং ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে এই রাজ্য। মেঘভাঙা বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা বিধ্বংসী ধসে তছনছ হচ্ছে শহরের পর শহর। বিপদসীমা ছাড়িয়েছে গঙ্গা। নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, দোকানপাট। রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, হিমাচলের দুর্যোগে এখনও অবধি ৫১জনের প্রাণ গেছে। ধ্বংসস্তূপে এখনও আটকে অনেকে। তুমুল বৃষ্টিতে নদীর জলস্তর বাড়ছে। আরেক রাজ্য উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। অতিবৃষ্টিতে সেখানেও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভূমিধসে বন্ধ রাস্তাঘাট। তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আগামী তিন দিনে পরিস্থিতি যে শুধরে যাবে এমন আশা দিতে পারছে না মৌসম ভবন। ক্লাউড বার্স্ট বা মেঘভাঙা বৃষ্টি পশ্চিম হিমালয়ের পাদদেশে নতুন কোনও ঘটনা নয়। হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশের রাজ্যগুলোর অবস্থানগত কারণে এখানে এমন ঘটনা প্রায় প্রতি বছরই হয়। মৌসম ভবনের রিপোর্ট বলছে, ধরমশালা, কাংড়া, পালামপুর, চাম্বা, হামিরপুর, মান্ডি, কুলু, মানালি, সুন্দরগড়, বিলাসপুর, সোলান, উনা এবং নাহান পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কোনও কোনও জায়গায় ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩৫০-৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে নদীগুলির জলস্তর বেড়ে গেছে। ভাকরা নাঙ্গাল ড্যামের জল ছাপিয়ে গেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও করুণ। অন্যদিকে ঘন ঘন ধসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে চণ্ডীগড়-মানালি হাইওয়ে।

এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু সকলকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলেছেন। ভূমিধস-প্রবণ এলাকাগুলি থেকে দূরে কোথাও আশ্রয় নিতে বলেছেন তিনি। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত মিলিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। নিম্ন উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

রাজধানী শহর শিমলাতেই অন্তত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সেইসঙ্গে মান্ডি, হামিরপুর, কাংরা, নাহান সহ বিভিন্ন এলাকা ভাসছে বন্যার জলে। যত্রতত্র ভেঙে পড়েছে বাড়ি। বন্ধ হয়ে গেছে সড়কপথ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাখণ্ড-ও। সেখানে আপাতত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চারধাম যাত্রা। হৃষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেললাইনের কাজে যুক্ত থাকা ১১৪ জন শ্রমিক একটি টানেলের মধ্যে আটকে পড়েন। পরে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।