বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শাহবাগে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) সামনের সড়কে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) ভোরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা অন্তত দুটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সকে ঘিরে বিক্ষোভ করার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা সাঈদীর জানাজা ঢাকায় করার দাবি জানান। পরে, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।
এর আগে, সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান দেলোয়ার হোসেন সাঈদী।
ঢাকায় গায়েবানা জানাজা হবে না: ডিএমপি কমিশনার
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের জন্য দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা রাজধানীতে করার অনুমতি দেয়া হবে না।
তার মৃত্যুর পর জামায়াত-শিবিরের হামলা-ভাঙচুরের কথা বিবেচনা করে অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মিন্টু রোডে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার এ কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “ফজরের নামাজের পর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল এলাকা দখল করে এবং সাঈদীর মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ঘিরে বিক্ষোভ করে। বিএসএমএমইউর সামনে তারা কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়।”
পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয় বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।
সাঈদীর মৃত্যুতে বিএনপির শোক
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতেশোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
মঙ্গলবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো শোকবার্তায় সাঈদীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
এই প্রথম জামায়াতের কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুতে বিএনপি শোক প্রকাশ করেছে। এর আগে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সময় নিরব ছিলো বিএনপি।
শোকবার্তায় ফখরুল বলেন, “কারাবন্দী অবস্থায় সাঈদীর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।” জামায়াতের এই নেতাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেম হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি। বলেন, “সাঈদী বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষকে ইসলামের আলোকিত পথে উদ্বুদ্ধ করেছেন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতি সহমর্মী এই মানুষটি জনসাধারণের মধ্যে বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞান চর্চা ও প্রচারে নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল ও তেজস্বী বক্তা।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “গুরুতর অসুস্থ মরহুম দেলোয়ার হোসেন সাঈদী গত ১৩ বছর বন্দী অবস্থায় থাকলেও তাকে কোনো সু-চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তার মৃত্যু স্বৈরশাসনের এক নির্দয় নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”
দাফন সম্পন্ন
দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে পিরোজপুরে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সাঈদীর ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে, বড় ছেলের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। দুপুর ১টার দিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মুজিবুর রহমান তার নামাজে জানাজা পরিচালনা করেন।
সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাঈদীকে আজীবন কারাবাসের দণ্ড দেন।
এর আগে, ২০১০ সালের ২৯ জুন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।