ভারতে ব্র্যান্ড নামে ওষুধ লেখার প্রবণতা ও ডাক্তারদের একাংশের সঙ্গে ওষুধ সংস্থার যোগসাজশের অভিযোগ নিয়ে এর আগে কঠোর হয়েছিল দেশের মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)। এ বার তারা দেশ জুড়ে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চিকিৎসকদেরই প্রেসক্রিপশনে ব্র্যান্ড নামের পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ভাবে জেনেরিক নাম লেখার নির্দেশ দিল।
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন (এনএমসি) সম্প্রতি ৬০ পাতার গাইডলাইন দিয়েছে। তাতে একাধিক বিষয় নিয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগেই এনএমসি জানিয়েছিল, রোগীর পরিবার যদি অভদ্র আচরণ করে, চিকিৎসকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে, মারমুখী হয় তাহলে সেই রোগীর চিকিৎসা না করার অধিকার থাকবে চিকিৎসকের। টেলিমেডিসিন নিয়েও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, টেলিমেডিসিন পরিষেবা আরও উন্নত করতে হবে। রোগীদের সঠিক গাইডলাইন দিতে হবে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের। পাশাপাশি, ওষুধের জেনেরিক নাম প্রেসক্রাইব করার জন্যও ডাক্তারদের কড়া নির্দেশ দিয়েছে এনএমসি।
গত কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় বৈঠকের পরে শেষ পর্যন্ত এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। আর সঙ্গে সঙ্গেই দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই এই নির্দেশিকার বিরোধিতা করছেন। তবে সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ) এমসিআই-এর এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ, আইএমএ-র যুক্তি, ব্র্যান্ড নাম ও জেনেরিক নাম, দুই-ই পাশাপাশি লেখাটাই বাঞ্ছনীয়। তাতে রোগীদের সুবিধা হবে।
এখন যদিও চিকিৎসকদের শুধুমাত্র জেনেরিক ওষুধই দিতে হয়। কিন্তু, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিলের ২০২২ সালে জারি করা নিয়মে শাস্তির কোনও বিধান ছিল না। কিন্তু এখন এনএমসি জানিয়েছে, ওষুধের জন্য ভারতে লাগামছাড়া খরচের কারণে স্বাস্থ্যখাতে জনসাধারণের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে। ব্র্যান্ডেড ওষুধের থেকে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ সস্তায় পাওয়া যায় জেনেরিক ওষুধ। সেইজন্য, জেনেরিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করলে স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমতে পারে এবং উন্নতমানের স্বাস্থ্য পরিষেবাও পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (প্রফেশনাল কনডাক্ট, এথিকস অ্যান্ড এটিকেট) রেগুলেশন্স, ২০০২-এর সংশোধনী আনা হয়। সেখানে বলা হয়, প্রত্যেক চিকিৎসককে তার প্রেসক্রিপশনে জেনেরিক নামে ওষুধ লিখতে হবে। শুধু তা-ই নয়, সেগুলি লিখতে হবে বড় হরফে। ওষুধের যু্ক্তিসঙ্গত ব্যবহারও যাতে চিকিৎসক নিশ্চিত করেন, জোর দেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারেও।