আলোচনার মাধ্যমে সুদানের সংঘাত নিরসনের আহ্বান জাতিসংঘের

সুদানী সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে লড়াই অব্যাহত থাকায় সুদানের রাজধানী খার্তুমের আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। ৮ জুন, ২০২৩ (ফাইল ছবি)

আফ্রিকার জন্য জাতিসংঘের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, আলোচনার মাধ্যমে সুদানের সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানিয়ে বুধবার বলেছেন, এর কোনো বিকল্প নেই।

আফ্রিকার জন্য জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মার্থা পোবি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, "সামরিক বিজয় অর্জনের জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কারো কারো আহ্বান, শুধুমাত্র দেশটিকে ধ্বংসের দিকেই ঠেলে দেবে। এই যুদ্ধ যত দীর্ঘ হবে, দেশটি ততই খণ্ডিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া বিদেশী হস্তক্ষেপ, সার্বভৌমত্বের হুমকি এবং সুদানের ভবিষ্যত, বিশেষ করে দেশটির যুব সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হবে।"

পোবি দারফুর অঞ্চলে, বিশেষ করে পশ্চিম দারফুরে যুদ্ধের জাতিগোষ্ঠীগত প্রকৃতি সম্পর্কে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে নৃশংস জাতিগোষ্ঠীগত সহিংসতা চলছে।

২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে দারফুরে ব্যাপক আকারে জাতিগোষ্ঠীগত সহিংসতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ২০০৫ সালে পরিস্থিতির তদন্ত শুরু করে এবং সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও, এখন পর্যন্ত তিনি আদালতের আওতার বাইরেই রয়ে গেছেন।

পবি বলেন, খার্তুম রাজ্য বর্তমান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষ করে, সুদানী সশস্ত্র বাহিনীর (এসএএফ) প্রধান কার্যালয়সহ তাদের স্থাপনাগুলির চারপাশে যুদ্ধ কেন্দ্রীভূত হয়েছে। উদ্বেগের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে কর্ডোফান এবং ব্লু নাইল রাজ্য।

জাতিসংঘ বলছে, সুদানে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জরুরী মানবিক সহায়তার প্রয়োজন। এপ্রিলের মাঝামাঝি প্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক দলগুলোর মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত, সাহায্য সংস্থাগুলি প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে সামান্য কিছু মানবিক সহায়তা দিতে পেরেছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক কার্যালয়ের অপারেশনস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ডিভিশনের পরিচালক এডেম ওসোর্নু বলেছেন, "সুদানের জনগণের জন্য যে রকম সহায়তার প্রয়োজন, তা প্রদানের জন্য মানবিক সংস্থাগুলি প্রস্তুত এবং তারা প্রয়োজনীয় সবকিছুই করতে ইচ্ছুক। তবে বিবাদমান দলগুলির দ্বারা নিয়মিত সাহায্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা এবং আমলাতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতাগুলি শিথিল না করলে তা করা সম্ভব নয়।"

মূলত, সুদানে জাতিসংঘের মিশনের প্রধান ভলকার পার্থেস নিরাপত্তা পরিষদকে পরিস্থিতি অবহিত করবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু মে মাসের শেষের দিকে, তিনি দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় সুদান সরকার তাকে একজন অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বলে ঘোষণা করে। এর কারণ হিসেবে সুদানের রাষ্ট্রদূত সংবাদদাতাদের বলেন, পার্থেস নিউজ চ্যানেল আল জাজিরাতে দেশের ঐক্য বজায় রাখতে সরকারের অক্ষমতা এবং আঞ্চলিক দেশগুলির সাথে আস্থা হারিয়ে ফেলার বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

পার্থেস ইউনিটামস নামে পরিচিত মিশনের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন, কিন্তু তিনি ওই অঞ্চল থেকে অন্যত্র অবস্থান করছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড সংবাদদাতাদের বলেছেন, পার্থেস বুধবারের বৈঠকে অংশ নিলে, খার্তুম সুদানে জাতিসংঘের মিশন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে।

তবে, সুদানের রাষ্ট্রদূত এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তার সরকার কাউকে এমন হুমকি দেয়নি।