বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ২ দিন ধরে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে পাহাড়গুলোতে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। শনিবার (৫ আগস্ট) জেলা প্রশাসন ২৫০টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান শনিবার (৫ আগস্ট) রাতে নগরীর আকবরশাহ এলাকার বিজয়নগর ও ঝিল পাহাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ২৫০টি পরিবারকে দু’টি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
গত ২ দিন ধরে চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মানুষের জানমাল রক্ষার্থে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম মহানগরকে ৬টি সার্কেলে ভাগ করে, পাহাড় রক্ষায় ও মানুষের জানমাল রক্ষায় কাজ করছে। প্রতিদিন মাইকের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরে যেতে জনগণকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “পাহাড় ধ্বসে যাতে মানুষের আর প্রাণ না দিতে হয়, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে। ঝুকিপূর্ণ পাহাড় থেকে ২৫০ পরিবারকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক জানান সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী গত কয়েকদিন আগে বেলতলী ঘোনায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা মানুষদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। আর, পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা ও নিয়মিত মামলা করা হয়েছে।”
বান্দরবানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
দুই দিনের টানা বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়, শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শহরের হাফেজঘোনা, বাসষ্টেশন, আর্মি পাড়া ও ইসলাম পুর এলাকার নিচু স্থান ৫ থেকে ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
এদিকে, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পৌর সভা ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মো. মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় বান্দরবানে ১৯২ টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
লামা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী ৮টি পরিবারের ৩৬ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। বলেন, “দুপুর থেকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।”
সাংগু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদ সীমার কাছ দিয়ে বইছে। জেলা প্রশাসক আরো জানান, “দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রসাশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছেন। ত্রাণ সমগ্রীর কোন অভাব নেই। প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।”
শহরের মৃত্তিকা ও পানি বিভাজিকা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘন্টায় বান্দরবানে ১৬৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আট বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে
রবিবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আট বিভাগেই আরো বৃষ্টিপাত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী অথবা ভারী বর্ষণ হতে পারে। রবিবার সকাল ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বান্দরবানে, ১৮৬ মিলিলিটার।
এদিকে, সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
অধিদপ্তরের বুলেটিনে আরো বলা হয়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় রয়েছে এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।