২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার কর্তৃক গৃহীত আইনের সাংবিধানিকতাকে চ্যালেঞ্জ করে করা একটি পিটিশনের শুনানি বুধবার শুরু করেছে ভারতের শীর্ষ আদালত। ওই আইনের অধীনে, বিতর্কিত জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেয়া হয়েছে, তাদের পৃথক সংবিধান বাতিল করা হয়েছে এবং রাজ্যের মাটিতে ও চাকরিতে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সুরক্ষা অপসারণ করা হয়েছে।
পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে সাংবিধানিক একটি বেঞ্চ ওই শুনানি শুরু করেছে, যেখানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। একই সাথে ১৯৪৭ সালে সদ্য স্বাধীন ভারতের সাথে যোগদানের পরে এই অঞ্চলকে দেওয়া বিশেষ মর্যাদাকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক পিটিশনেরও শুনানি করছে ওই একই বেঞ্চ। এই ধরনের পিটিশনগুলি ২০১৯ পরিবর্তনের আগে দায়ের করা হয়েছিল।
এই নজিরবিহীন পদক্ষেপটি এলাকাটিকে দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। লাদাখ এবং জম্মু-কাশ্মীর, উভয়ই তাদের নিজস্ব আইনসভা ছাড়াই সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা শাসিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপের তাৎক্ষণিক প্রভাব ছিল, মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলটি কোন রকম গণতান্ত্রিক প্রমাণপত্রাদি ছাড়াই আমলাদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া এর পতাকা, ফৌজদারি কোড এবং সংবিধানও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
কাশ্মীর-ভিত্তিক ভারতীয় আইন প্রণেতা হাসনাইন মাসুদি বলেন, “এই সাংবিধানিক কাঠামো ভারতীয় ইউনিয়নের অংশ হওয়ার জন্য একটি প্রক্রিয়া প্রদান করেছে। প্রত্যাহারটি ছিল বিশ্বাসঘাতকতা এবং আমাদের পরিচয়ের উপর আক্রমণ।” মাসুদি মোদি সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জকারী প্রথম আবেদনকারীদের একজন । তিনি কাশ্মীরের হাইকোর্টে বিচারক হিসেবেও কাজ করেছেন।
কাশ্মীর অঞ্চলের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, ন্যাশনাল কনফারেন্সের একজন প্রতিনিধি মাসুদি, আরও বলেন, “২০১৯ সালের সিদ্ধান্তটি ভারতের সংবিধানের অধীনে প্রতিটি নিয়ম এবং প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছে”।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নতুন আবাসিক অধিকারকে বৃহত্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তাদের একটি অতিরিক্ত পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি জনসংখ্যার আদল বদলে দিতে পারে।
অনেক কাশ্মীরি উদ্বিগ্ন যে বহিরাগতদের আগমন একটি গণভোটের ফলাফল পরিবর্তন করতে পারে, যদি সেটা কখনও হয়। যদিও এটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের প্রস্তাবের অধীনে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, যাতে কাশ্মীরকে পাকিস্তান বা ভারতে যোগদানের পছন্দ দেয়া হয়েছিল।
বেশিরভাগ মুসলিম কাশ্মীরিই পাকিস্তানি শাসনের অধীনে বা একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে অঞ্চলটিকে একত্রিত করার বিদ্রোহী লক্ষ্যকে সমর্থন করে। নয়াদিল্লি কাশ্মীর জঙ্গিবাদকে পাকিস্তান মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদী বলে জোর গলায় দাবী করে, তবে ইসলামাবাদ সেই দাবী অস্বীকার করে। সেখানকার সংঘর্ষে এ পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনী নিহত হয়েছে।
কাশ্মীরে গভীরভাবে অজনপ্রিয় হলেও, এই পদক্ষেপটি ভারতের বেশিরভাগ অংশে অনুরণিত হয়েছিল, যেখানে মোদী সরকার অশান্ত অঞ্চলটির বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে থাকা হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য সমর্থকদের সানন্দ সমর্থন পেয়েছিল।
"নয়া কাশ্মীর" বা "নতুন কাশ্মীর" বলে অভিহিত করার জন্য নয়াদিল্লির প্রচেষ্টায়, ভূখণ্ডের জনগণকে তাদের নাগরিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে অনেকাংশে নিথর করে রাখা হয়েছে, কারণ ভারত কোনো প্রকার ভিন্নমতের প্রতি কখনো কোনো সহিষ্ণুতা দেখায়নি।
কাশ্মীরের সংবাদমাধ্যমও বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই অঞ্চলের অনেক সাংবাদিককে তখন থেকে য় দেখানো হয়েছে, হয়রানি করা হয়েছে, থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে এবং কখনও কখনও গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। প্রশাসন রিপোর্টিং নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে একটি নতুন মিডিয়া নীতিও বাস্তবায়ন করেছে।