ভারতে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪: বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতাদের তালিকায় নতুন মুসলিম ও খ্রিস্টান নাম

ভারতে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪: বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতাদের তালিকায় নতুন মুসলিম ও খ্রিস্টান নাম।

ভারতে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা শনিবার ২৯ জুলাই দলের ১৩ জন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি, নয় জন সাধারণ সম্পাদক এবং ১৩ জন সম্পাদকের নাম প্রকাশ করেছেন। সহ-সভাপতির তালিকায় দিলীপ ঘোষের নাম না থাকায় পশ্চিমবঙ্গ-বিজেপির অন্দরে শোরগোল শুরু হয়েছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সর্বভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নতুন তালিকায় বিজেপির নির্বাচনী রণনীতি বদলের ইঙ্গিত স্পষ্ট। বিশেষ করে সদ্য ২৬টি বিরোধী দলের গঠিত জোট ‘ইন্ডিয়া’ গঠিত হওয়ার পর বিজেপি টিম-ইন্ডিয়ার বেশ কিছু নতুন মুখ তাৎপর্যপূর্ণ।

বিজেপির নতুন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতিদের তালিকায় নাম আছে উত্তরপ্রদেশের তারিক মনসুর-এর। এছাড়া সর্বভারতীয় সম্পাদকের তালিকায় স্থান হয়েছে কেরলের অনিল অ্যান্টনি-র। তারিক বর্তমানে উত্তর প্রদেশ বিধান পরিষদের সদস্য, অর্থাৎ সে রাজ্যের একজন বিধায়ক।

অন্যদিকে, অনিল অ্যান্টনি কেরলের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা একে অ্যান্টনি-র পুত্র। গত এপ্রিলে বিজেপিতে যোগ দিয়ে জুলাইয়ের শেষে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হয়ে গেলেন এই তরুণ নেতা। কংগ্রেস ছাড়ার আগে তিনি ছিলেন কেরল পার্টির আইটি সেলের প্রধান। বিশেষজ্ঞ মহলের বিশ্লেষণ, অ্যান্টনি-পুত্র, এই পরিচয়ের বাইরে যাঁর নিজের কোনও পরিচিতি নেই, এমন একজনকে বিজেপি এতটা গুরুত্ব দিল স্রেফ কেরলের খ্রিস্টানদের মন পেতে। আবার আদিবাসী ভোটের লক্ষ্যেই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং-সহ তিনজনকে ছত্তীসগড় থেকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে বলে তাঁদের মত। ওই রাজ্যে আদিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ জন্মেছে তুলনামূলকভাবে বেশি।

চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তারিক মনসুর ছিলেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। সেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির বিধান পরিষদ সসদ্য হন তিনি। আলোচনা ছিল তাঁকে কোনও রাজ্যের রাজ্যপাল করা হবে। আপাতত সেই পরিকল্পনা বদলে তাঁকে উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও, সারা দেশে প্রচারে হাজির করবে বিজেপি। সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির তালিকায় কেরলের আবদুল্লা কুট্টির নামও আছে।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ৬৬ বছর বয়সি মনসুরকে এতটা গুরুত্ব দেওয়ার কারণ তিনি একজন 'পছমন্দা' অর্থাৎ পশ্চাৎপদ অংশের মুসলিম মুখ। ২০২৪-এর ভোটে বিজেপি গোটা দেশেই দরিদ্র মুসলিমদের ভোট পেতে মরিয়া। মনসুর এই লক্ষ্যপূরণে তাঁদের নতুন মুখ।
বিজেপিতে মুক্তার আব্বাস নকভি, শাহনাওয়াজ হুসেনের মতো চেনা মুখ আছেন। কিন্তু পছমন্দা মুসলিমদের কাছে টানতে হলে ওই সম্প্রদায়ের মুখ দরকার, মনে করছে বিজেপি শিবির। সেই কারণে বহুদিন পর একজন মুসলিম নেতাকে দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বসালো দল। বিজেপির একেবারে শুরুতে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি ছিলেন সিকন্দর ভখত। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং একাধিক রাজ্যের রাজ্যপালও ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর জমানায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেরলে অনিলকে নিয়ে বিজেপির অঙ্ক হল - ওই রাজ্যে দুই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম এবং খ্রিস্টানরা বরাবর কংগ্রেস ও বামেদের পাশে আছে। তাই আরএসএস সেখানে তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও বিজেপি ভোটে সুবিধা করতে পারছে না। বিজেপি শিবির মনে করছে, শুধু হিন্দুভোটের একীকরণ করে তাঁরা কেরলের ভোট রাজনীতিতে সাফল্য পাবে না। তাই দক্ষিণের ওই রাজ্যে তাঁরা খ্রিস্টানদের পাশে পেতে চাইছে।