কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীকে কর্নাটক থেকে সংসদের রাজ্যসভায় পাঠানোর ভাবনা দলের অভ্যন্তরে

কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী

কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধীকে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক থেকে রাজ্যসভায় প্রার্থী করার প্রস্তাব নিয়ে দলের অভ্যন্তরে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়েছে। তাঁকে দলের এই ভাবনার কথা জানিয়েছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া। কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে গত ১৭-১৮ জুলাই বিরোধী দলগুলির বৈঠকের ফাঁকে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী নেত্রীকে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন ইন্দিরা গান্ধীর মতো কর্নাটক থেকে পূর্ণ সময় সাংসদ থাকেন। ইন্দিরা ১৯৭৮ সালে কর্ণাটকের চিকমাগালুর থেকে জিতে লোকসভায় গিয়েছিলেন।

সনিয়াও ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন কর্নাটকের বেল্লারি থেকে। সেবার তিনি বিজেপির প্রার্থী প্রয়াত সুষমা স্বরাজকে ৫৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। তবে কংগ্রেস নেত্রী সেবার উত্তর প্রদেশের রায়বেরলি কেন্দ্র থেকেও বিজয়ী হওয়ায় পরে বেল্লারি আসনটি ছেড়ে দেন। ইন্দিরা গান্ধী রায়বেরলির-ও সাংসদ ছিলেন।

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন সনিয়া পাকাপাকিভাবে এবার তাঁর রাজ্য থেকে সংসদে যান। দলীয় সূত্রের খবর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেও চাইছেন সনিয়া কর্নাটক থেকে রাজ্যসভায় যান। তিনিও সনিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু কংগ্রেস নেত্রী এখনও কোন মতামত জানাননি। রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও এখনও মতামত দেননি।

আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা না হলেও কংগ্রেস নেত্রীর শরীর-স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে দলের প্রায় সকলেই নিশ্চিত যে রায়বেরেলি থেকে ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি আর প্রার্থী হবেন না। দলীয় স্তরে ভাবনা আছে রায়বেরেলিতে প্রার্থী হবেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং আইনি জটিলতা যদি মিটে যায় রাহুল গান্ধী ফের আমেথি থেকে লড়াই করবেন। গতবারের নির্বাচনে তিনি বিজেপির নেত্রী স্মৃতি ইরানির কাছে হেরে যান। কেরলের ওয়ানাড থেকে জয়ী হয়ে তিনি লোকসভায় ফিরেছিলেন। মোদী পদবিধারীদের মানহানির মামলায় তাঁর সাংসদ পদ চলে গিয়েছে। গান্ধী পরিবার থেকে এখন শুধু সনিয়া গান্ধী-ই সংসদে আছেন।

সনিয়াকে সংসদে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে দলের সব স্তরে একটা দাবি আছে আর সেই কথা মাথায় রেখেই প্রাক্তন কংগ্রেস নেত্রীর অত্যন্ত পছন্দের সদস্য সিদ্ধারামাইয়া চাইছেন সোনিয়া তাঁর রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় যান। তিন মাস আগে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস বিপুলভাবে জিতে আসার পর মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে সিদ্ধারামাইয়ার সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডিকে শিবকুমারের তীব্র বিরোধ তৈরি হয়েছিল। কংগ্রেস নেতৃত্ব খানিক দিশেহারা ছিলেন। সনিয়া তখন পছন্দের সিদ্ধরামাইয়াকে সমর্থন করেন। অন্যদিকে রাহুল গান্ধী চেয়েছিলেন শিবকুমারকে। কংগ্রেস হাই কমান্ড সনিয়ার মতেই সায় দেয়।

এপ্রিল মাসে কর্নাটকে রাজ্যসভার তিনটি আসন ফাঁকা হবে। তার মধ্যে দুটি এখন রয়েছে কংগ্রেসের দখলে। তৃতীয়টি বিজেপির হাতে। কংগ্রেস বিধানসভায় ১৩৫ আসন পাওয়ায় রাজ্যসভার তিনটি আসন এবার কংগ্রেস শিবির পাবে।

সনিয়াকে রাজ্য সভায় পাঠানোর আরেকটি কারণ হল তার সাংসদ পদ শেষ হয়ে গেলে ১০ জনপথের বাংলোটি ছেড়ে দিতে হবে। কারণ বিজেপি সরকার ২০১৭ সালে এসপিজি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গান্ধী পরিবারের উপর থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এসপিজি নিরাপত্তার কারণেই ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর থেকে ১০ জনপথের বাড়িটি কংগ্রেস নেত্রীর জন্য বরাদ্দ আছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী বাংলোর থেকেও বড়। রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে ওই বাংলোটি পেয়েছিলেন।

এখন সনিয়ার সংসদ পদ চলে গেলে ওই বাড়িটি ছেড়ে দিতে হবে, সেটাও কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছেন না। কারণ সনিয়া ওই বাড়ি থেকে তাঁর অফিস করেন এবং দলের অনেক কাজকর্ম সামাল দেন। তাছাড়া দলে সনিয়ার গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তার কথা বিবেচনায় রেখেও প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিকে সংসদে রেখে দেওয়া খুবই জরুরী বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে।