রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর, দশ লাখেরও বেশি শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়ে এবং প্রতিবেশী কিয়েভকে কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করে, আইনের শাসনের অবমাননাকারী দেশ থেকে একটি মানবাধিকার চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিজের ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে মধ্য ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড।
কিন্তু পোল্যান্ডের নতুন অর্জিত সেই দীপ্তি দ্রুত ম্লান হতে যাচ্ছে। কারণ ওয়ারশ এবং অন্যান্য চারটি প্রতিবেশী দেশ নতুন করে শুরু করতে যাওয়া ইউক্রেনের শস্য রপ্তানি করার দ্বার রুদ্ধ করে দিয়েছে। এই মাসে অনেক বছরের পুরনো ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ থেকে রাশিয়া নিজেকে প্রত্যাহার করার পর থেকে, সমুদ্র পথে ইউক্রেন থেকে লক্ষ লক্ষ টন শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, রোমানিয়া বুলগেরিয়া এবং পোল্যান্ড। তারা যুক্তি দিয়ে বলছে, ইউক্রেনের সিরিয়ালগুলি স্থানীয় বাজারে বন্যার মতো ছেয়ে গেছে এবং সেগুলো আমাদের নিজেদের ফসলের বাজার দখল করে ফেলছে।
শস্য নিয়ে অচলাবস্থার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে ২৭ সদস্যের ব্লক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকে বেশ জোরেশোরে একত্রিত হয়েছিল ব্লকটি। এই বিভক্তি ইইউ-তে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
ব্রাসেলস ভিত্তিক জার্মান মার্শাল ফান্ড এবং ওয়াশিংটন ভিত্তিক পিটারসন ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সিনিয়র ফেলো জ্যাকব কিরকেগার্ড বলেছেন, "আমরা এখন যা দেখছি তা হল, পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলি ইউক্রেনের জন্য তাদের রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থনের বিপরীতে অর্থনৈতিক প্রভাবকে বিবেচনায় নিচ্ছে”।
ব্ল্যাক সি রুটে ইউক্রেনের শস্য পরিবহন বন্ধ হয়ে যাবার পর, গত বছর ঠিক করা ইউরোপীয় রেল এবং সড়ক, "সংহতি রুট" সম্প্রসারণের উপায়গুলি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার ব্রাসেলসে বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৃষিমন্ত্রীরা।
ইউরোপীয় কমিশন পাঁচটি বল্টিক সমুদ্র বন্দর দিয়ে শস্য রপ্তানি করার জন্য লিথুয়ানিয়ার একটি পৃথক প্রস্তাবও বিবেচনা করছে।
পাঁচটি দেশ এখন চায়, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হওয়া চুক্তিটি, চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হোক।
পোলিশ কৃষিমন্ত্রী রবার্ট টেলাস মিডিয়া ওয়েবসাইট ইউরাকটিভকে বলেছেন, "আমি আশা করি মেয়াদ বাড়ানো হবে। কিন্তু যদি তা না হয়, পোল্যান্ডকে এখনও সমস্যাটি মোকাবেলা করতে হবে, এবং আমরা দেখিয়েছি যে, আমরা তা করতে সক্ষম।"
কমিশন বলেছে, সেপ্টেম্বরের সময়সীমার আগে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে। কিন্তু ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক সদস্য, যে কোনো মেয়াদ বৃদ্ধির বিরোধিতা করছেন।
তিনি বলেন, "এটি ইউক্রেনের জন্য ইইউ সংহতিকে ক্ষুণ্ন করবে, একমাত্র যিনি খুশি,তিনি হলেন [রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট] ভ্লাদিমির পুতিন।"
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানির উপর বিধিনিষেধ বাড়ানোর চাপের সমালোচনা করেছেন। তিনি মঙ্গলবার তার সান্ধ্যকালীন ভাষণে এটা "অগ্রহণযোগ্য" এবং "ইউরোপীয় আচরণ নয়" বলে অভিহিত করেছেন – যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে অন্যান্য সমালোচকদের দ্বারা করা মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি।