আফগানিস্তান-ভিত্তিক পলাতক জঙ্গিরা পাকিস্তানে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী হামলার ক্রমবর্ধমান অভিযোগের মধ্যে তালিবান নেতাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে, বুধবার আফগানিস্তানে যাচ্ছেন পাকিস্তানের একজন ঊর্ধ্বতন দূত।
ইসলামাবাদের নবনিযুক্ত আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি আসিফ দুরানি পারস্পরিক বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে কাবুলে বৈঠক করবেন। মঙ্গলবার পাকিস্তানের একজন কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। মিডিয়ার সাথে প্রকাশ্যে যোগাযোগ করার অনুমতি না থাকায়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি ভিওএ-এর সাথে কথা বলেছেন।
কাবুল সফরের বিষয়ে দুরানি ভিওএ-কে বলেন, দুই বছর আগে তালিবান দেশটির নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার পর থেকে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানের সাথে পাকিস্তানের বাণিজ্য অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। সরকারী তথ্য অনুসারে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত চীন এবং ইরানসহ অন্যান্য প্রতিবেশীদের সাথে আফগানিস্তানের বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রশংসা করেছেন। দুরানি বলেন, "আপেক্ষিক আফগান শান্তি" পাকিস্তানকে স্থলবেষ্টিত মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সাথে আফগান ট্রানজিট রুটের মাধ্যমে বাণিজ্য বাড়িয়ে প্রায় ২০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম করেছে, যা দুই বছর আগেও মাত্র সাড়ে পাঁচ কোটি ডলার ছিল।
দুরানি বলেন, "এটি আফগানিস্তানের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো খবর এবং তাদের অনেক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে; বিশেষ করে এটি দেশটিতে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনবে, জাতিসংঘের অনুমান অনুসারে দারিদ্র্যের এই হার বর্তমানে ৯৫% এর কাছাকাছি। এটি নিশ্চয়ই একটি আশাব্যঞ্জক প্রক্রিয়া, তবে এতে একটু সময় লাগবে।"
মূলত পাকিস্তানে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে দুররানির এই সফর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, বিশেষ করে প্রায় ২,৬০০ কিলোমিটার আফগান সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে। চলমান এই সহিংসতায় চলতি বছর ৪০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর লোক। । গত ১২ জুলাই মাত্র এক দিনেই ১২ জন সৈন্যকে হারিয়েছে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী।
ইসলামাবাদের কর্মকর্তাদের মতে, সহিংসতাগুলো প্রধানত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান, বা টিটিপি নামে পরিচিত নিষিদ্ধ গোষ্ঠীগুলির একটি জোটের দ্বারা বলে দাবি করা হয়, কিংবা দায়ী করা হয়, যারা আফগানিস্তানের অভয়ারণ্য থেকে পাকিস্তানি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে আসছে।
পাকিস্তান তালিবানকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা তাদের ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির চুক্তি মেনে চলার এবং সন্ত্রাসীদের অন্য দেশকে হুমকি দেওয়ার জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করা থেকে বিরত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।
গত সপ্তাহে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী টিটিপি এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলিকে তাদের মাটি থেকে হুমকি প্রদানের অনুমতি দেওয়ার বিরুদ্ধে তালিবানকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছিল।
তবে, টিটিপি বা অন্যান্য গোষ্ঠী আফগানের মাটি আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহার করছে বলে পাকিস্তানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে তালিবান কর্তৃপক্ষ। শনিবার তালিবানের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছে, ইসলামাবাদ যেন তাদের অভিযোগের পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করে, যাতে করে তাদের দাবিগুলো তদন্ত করা যায়।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান প্রায় ৩০ লাখেরও বেশি আফগান শরণার্থী এবং অর্থনৈতিক অভিবাসীদের আশ্রয় দিয়েছে, যারা তাদের দেশে কয়েক দশক ধরে চলা সংঘাত ও দারিদ্রের কশাঘাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছে।