হিরো আলম লাঞ্ছিত

Your browser doesn’t support HTML5

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম সোমবার (১৭ জুলাই) বনানী এলাকায় একটি ভোটকেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময় শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন।

ঘটনাস্থল থেকে সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, হিরো আলম বিকালে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল ভোটকেন্দ্র থেকে বের হওয়ার সময় হামলার শিকার হন। হিরো আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিরো আলমের ওপর শারীরিকভাবে হামলা করা হয়েছে। হিরো আলম এখন অচেতন অবস্থায় আছ। তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে।তার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে।”

মোহাম্মদ ইলিয়াস রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামনে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান। তিনি জানন “হিরো আলমসহ হামলায় আহতরা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন।” তিনি জানান “ নির্বাচনে জয়ীও হলেও এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে এমন হামলা ন্যাক্কারজনক।”

তিনি আরে জানান, তারা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাননি। সকাল থেকে শুধু তাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে কিছু করা হবে কিছু করা হবে বলে।

স্বতন্ত্র এই প্রার্থী বনানী মডেল স্কুল ভোটকেন্দ্রে সোমবার) সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা আমার এজেন্টদের বের করে দিতে ভীতিজনক কৌশল অবলম্বন করেছে। তারা নারীসহ আমাদের কয়েকজন এজেন্টকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং তাদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়।”

কোথায় তার এজেন্টদের প্রবেশে সমস্যা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি ভাষানটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয় ও জামিয়া মাদরাসা কেন্দ্রের কথা উল্লেখ করেন।

হিরো আলমের ওপর হামলা গণতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগের তামাশা: মির্জা ফখরুল

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলাকে গণতন্ত্রের নামে তামাশা আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “এতে প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ কীভাবে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে।” তিনি বলেন, “হামলার ঘটনা আবার প্রমাণ করেছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।”

সোমবার খুলনা ডাকবাংলা চত্বরে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ কতটা দেউলিয়া হয়ে গেছে তা ভাবাই যায় না। তাই অরাজনৈতিক হিরো আলমকেও ভয় পায়।”

তিনি বলেন, “ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও ভোটের সময় আলম একটি ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিলেন। তখন আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, নির্দয়ভাবে মারধর করে ভোটকেন্দ্রের বাইরের রাস্তায় ফেলে দেয়।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “হিরো আলমের মতো একজন অরাজনৈতিক প্রার্থীকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মারধরের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাংলাদেশে তারা কী মজার দৃশ্য তৈরি করেছে! এই সরকার গনতন্ত্রের নামে ও নির্বাচনের নামে তামাশা করছে। তারা (আওয়ামী লীগ নেতা) আবার বলবে যে গণতন্ত্র তাদের হাতে সবচেয়ে নিরাপদ এবং তারা অতীতে ভালো নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলো।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন এবং বাংলাদেশের মানুষ তাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটু ভিন্নভাবে চেনেন।”

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, “একজন প্রার্থীর ওপর হামলা করা হয়েছে। আমি শুনেছি ও জেনেছি। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রয়োজন ছিলো বলে আমি মনে করি না। যারা হামলা করেছেন, তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করেছে বলে আমার মনে হয়। আমি এ ঘটনার নিন্দা জানাই।”

সোমবার বিকালে উপনির্বাচনে ভোট শেষ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা বলেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানান আরাফাত।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী বলেন, “আমি চাই নির্বাচন কমিশন (ইসি) যাতে সুষ্ঠু তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের নির্বাচনে আর না ঘটে।”

হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: ইসি আলমগীর

যারা হিরো আলমকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মোহাম্মদ আলমগীর। তিনি বলেন, “হিরো আলমের ঘটনা অন্যায়। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।”

সোমবার নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের নির্বাচন-পরবর্তী এক ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, “আজকের উপনির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। আমি এখন পর্যন্ত অশান্তির কোনো ঘটনা দেখিনি। ঢাকায় ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে…একটি কেন্দ্র কিছু একটা ঘটেছে, তার মানে এই নয় যে নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভোটে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট।” নির্বাচন কমিশন ‘রাজনৈতিক দলের অংশ’ হয়ে গেছে এমন মন্তব্যের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের কথা বলার অধিকার সবার আছে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে আমরা দলের অঙ্গ হয়েছি কি না।”