একতরফা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কম্বোডিয়ার জনগণ

৪ জুলাই, ২০২৩-এ তোলা এই ছবিতে, কম্বোডিয়ার গ্রাসরুটস ডেমোক্রেটিক পার্টির (জিডিপি) একজন সদস্য (বামে) নম পেনে নির্বাচনী প্রচারনার সময় লিফলেট বিতরণ করছেন৷

কম্বোডিয়ার জনগণ এই মাসে অনুষ্ঠেয় একটি নির্বাচনে ভোট দেবে। এই নির্বাচন, পশ্চিমা দেশগুলো, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং গণতন্ত্রপন্থী সক্রিয় কর্মীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমালোচিত। তবে, নম পেনের কর্তৃপক্ষ জোর দিয়ে বলছে যে, ২৩ জুলাইের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে৷

নির্বাচনী প্রচারকালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, সারাদেশে এক লাখের বেশি পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে; যদিও ১০ বছর আগের নির্বাচনী প্রচারের তুলনায় এখনকার প্রচারের উত্তেজনা অনেক কম। তখন কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি সামগ্রিক ভোটে জয়লাভের খুব কাছাকাছি চলে এসেছিলো।

কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টির সেই সাফল্য ছিলো ক্ষণস্থায়ী। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ২০১৭ সালের শেষের দিকে, কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকে আদালত বেআইনি ঘোষণা করে। পরের বছর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে সিপিপি সর্বমোট ১২৫ আসনের সবকটি আসনে জয় লাভ করে এবং কম্বোডিয়া এক-দলীয় শাসনের রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হয়।

এর পর, ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে ছয় বছর ধরে চলা দমন-পীড়ন কালে ১০০ জনেরও বেশি বিরোধী দলের সমর্থক আদালতে অভিযুক্ত হন। তাদের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদানের অভিযোগ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ পর্যন্ত আনা হয়। সিএনআরপি প্রধান কেম সোখাসহ অনেককে কারাগারে পাঠানো হয়।কেম সোখা ২৭ বছর ধরে সাজা ভোগ করছেন।আর, অন্যরা বিদেশে পালিয়ে গেছন।

গত মে মাসে, ক্যান্ডেললাইট পার্টিকে এই বছরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেয়া হয়। এর আগে, জাতীয় নির্বাচন কমিটি, তাদের বিরুদ্ধে ভুল নির্বাচনী নিবন্ধনপত্র দাখিল করেছে বলে রায় দেয়।

কম্বোডিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস-এর নির্বাহী পরিচালক চাক সোফেপ ২৯ জুন ভিওএ-কে বলেছেন, হুন সেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। আর, সমাজকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে।

গত ফেব্রুয়ারি-তে হুন সেনের নির্দেশে কম্বোডিয়ার শেষ স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা, ক্যান্ডেললাইট পার্টিকে অযোগ্য ঘোষণা করা, ভিন্নমতাবলম্বীদের কারাগারে পাঠানো এবং গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর রোধ করার বিষয়ে সমালোচনা মুখর ছিলো পশ্চিমা দেশগুলো।

গত ২০১৮ সালে সামগ্রিক ভোটের মাত্র ৫.৮ শতাংশ ভোট পান ফানসিনপেক। আর, গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে কোনো আসনেই জিততে পারেনি।তবে একদলীয় শাসক দলের একজন মুখপাত্র সম্প্রতি দাবি করেছেন, ফানসিনপেক উন্মুক্ত জাতীয় পরিষদের অন্তত অর্ধেক আসনে জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি আরো সাতটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। তবে, বাকি দলগুলোর প্রত্যেকটি ২০১৮ সালের নির্বাচনে সামগ্রিক ভোটের ১ শতাংশের বেশি ভোট পায়নি।

কম্বোডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর কোঅপারেশন অ্যান্ড পিস-এর বিশিষ্ট সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ব্র্যাডলি মুর্গ বলেছেন, এই নির্বাচন এখনো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হুন সেন স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তিনি অবসর নিতে চান এবং নির্বাচনের পর তার বড় ছেলে হুন মানেট-এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান।

ঠিক কবে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত হবেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি হুন সেন; যদিও, কিছু পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে পারেন। সেই ক্ষমতা হস্তান্তর মসৃণভাবে হবে কি না, এখন তা-ই দেখার বিষয়।