পদত্যাগ করছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুথ, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভোট চাইলেন পিটা

ব্যাংককের গভর্নমেন্ট হাউসে সংবাদদাতাদের সাথে কথা বলছেন, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রয়ুথ চ্যান-ওচা। ২০ মার্চ, ২০২৩। (ফাইল ছবি)

থাই প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা, মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছেন। দেশটির সাবেক এই সেনাপ্রধান নয় বছর আগে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

প্রয়ুথ (৬৯) ২০১৪ সালে একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ১৯৩২ সালে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রের অবসানের পর থেকে সেটি ছিল ১৩ তম অভ্যুত্থান, তার আগে রাজকীয় সেনাবাহিনী থাইল্যান্ডে গণতন্ত্রকে কখনই প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়নি।

সব সময়ে প্রয়ুথ নিজেকে একজন সৈনিক হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যিনি জাতিকে অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করার জন্য রাজনীতিতে পা রাখতে বাধ্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিজেকে নতুন করে উদ্ভাবনের মধ্যমে, সাবেক ওই সৈনিক দুর্বল অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এবং ব্যাপক গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ সত্ত্বেও পদত্যাগ করতে অস্বীকার করে আসছিলেন।

গুজব ছিল যে, ১৪ মে নির্বাচনে তার দলের খারাপ পারফরম্যান্স সত্ত্বেও প্রয়ুথ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে থাকার চেষ্টা করতে পারেন। যার ফলাফল পর্যবেক্ষকরা সামরিক সরকারের প্রত্যাখ্যান হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু প্রয়ুথের মঙ্গলবারের বিবৃতিটি ক্রমবর্ধমান সেই গুজবকে উড়িয়ে দিল।

ইউনাইটেড থাই নেশন বা ইউটিএন, পার্টির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, "এখন থেকে, আমি ইউটিএন পার্টির সদস্য হিসেবে পদত্যাগ করে রাজনীতি ছেড়ে দিচ্ছি।"

তবে, নতুন কাউকে নিয়োগ না করা পর্যন্ত তিনিই তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকবেন।

থাই গণতন্ত্রপন্থী নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত, যিনি প্রয়ুথের পর তাঁর পদ দখলের লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছিলেন, তার মুভ ফরওয়ার্ড পার্টি (এমএফপি) মে মাসে নিম্ন হাউজে ১৫১ টি আসন অর্জন করার পর, দেশ পরিচালনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহের মুখোমুখি হয়েছেন।

৪২ বছর বয়সী পিটা, রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করার জন্য নির্বাচন-পরবর্তী দেশব্যাপী সফরে ব্যাপক জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন। তবে তার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে, বিদায়ী সরকারের অধীনে লিখিত একটি সংবিধান দ্বারা, যেখানে বলা হয়েছে যে কোনও নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের সম্মিলিত দুটি কক্ষ থেকে ৭৫০ ভোটের সম্পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে।

পিটা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকেও আইনি হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন, কমিশন তদন্ত করছে যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি এখন বিলুপ্ত কোম্পানিতে মিডিয়া শেয়ারের হোল্ডিং লুকিয়েছিলেন, যখন কিনা তিনি প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য লড়াইয়ে নেমেছিলেন।

কমিশন যদি মামলাটিকে সাংবিধানিক আদালতে ঠেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, পিটা একজন আইন প্রণেতা হিসাবে বরখাস্ত হতে পারেন এবং রাজনীতি থেকে দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারেন এবং সম্ভবত জেলেও যেতে হতে পারে।

আদালত গত ২০ বছরে বেশ কয়েকটি গণতন্ত্রপন্থী দলকে ভেঙে দিয়েছে, যার মধ্যে মুভ ফোওয়ার্ডের পূর্বসূরি, ফিউচার ফরোয়ার্ডও রয়েছে।

সিঙ্গাপুর ভিত্তিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গবেষণা গোষ্ঠী আইএসইএএস ইউসুফ ইশাক ইনস্টিটিউটের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নেপন জাতুসরিপিটক বলেছেন, "প্রধানত সামরিক বাহিনী নিযুক্ত সিনেটের কারণে পিটা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট সমর্থন পাবেন, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।"

থাইল্যান্ডের নরেসুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং প্রভাষক পল চেম্বার্স বলেছেন, কিন্তু যদি ফেউ থাইকেও সিনেট দ্বারা অবরুদ্ধ করা হয়, তাহলে ক্ষমতাসীন ফালাং প্রচার দলের প্রার্থী – সাবেক জেনারেল প্রাবিত ওংসুওন – সিনে আসতে পারেন।

থাইল্যান্ড গত দুই দশক ধরে পর্যায়ক্রমিকভাবে রাস্তায় বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছে, অস্থিরতার ফলে প্রায়ই রক্তাক্ত হয়েছে জনপথ।

১৪ মে নির্বাচনে মালয়েশিয়া সীমান্তের কাছে ইয়ালা প্রদেশের নিজ এলাকার প্রতিনিধিত্বকারী পার্লামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ২৫ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সাদেহ বলেন, "এখানে মানুষ কেবল একটি নতুন সরকার চায়, গণতন্ত্র শিবির থেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী চায়।"

তিনি আরো বলেন, “আমি শুধু একটি সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চাই। "কাঠামোগত পরিবর্তন রাতারাতি ঘটবে না, কিন্তু যখন আমাদের প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে, তখনই প্রকৃত পরিবর্তন ঘটবে।"