ধর্মীয় বিদ্বেষের উদ্বেগজনক বৃদ্ধির নিন্দা করেছে জাতিসংঘ কাউন্সিল

সুইডেনে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর প্রতিবাদে, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সুইডিশ কনস্যুলেটের বাইরে একটি বিক্ষোভের সময় মহিলারা স্লোগান দিচ্ছেন৷ ২২ জানুয়ারী, ২০২৩। (ফাইল ছবি)

আন্তর্জাতিক চুক্তির একটি বিরল মুহুর্তে, ধর্মীয় বিদ্বেষের উদ্বেগজনক উত্থানের বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে একটি বিতর্কে অংশ নেওয়া কয়েক ডজন দেশ অন্যদের বিশ্বাসের প্রতি সহনশীলতার অভাবের নিন্দা করেছেন। তারা বলেছেন এই কারণই বৈষম্য, বৈরীতা এবং সহিংসতায় ইন্ধন যুগিয়েছে।

২৮শে জুন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একটি মসজিদের বাইরে একজন ইরাকি উদ্বাস্তু কর্তৃক একটি কুরআন পোড়ানোর কারণে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ঈদ-উল-আযহার মুসলিম ছুটির সময় ওই ঘটনাটি ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায়, সারা বিশ্বের ইসলামিক এবং অন্যান্য দেশগুলির পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে নিন্দা জানানো হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বলেছেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, মানুষকে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে অসংখ্য সহিংসতা, সন্ত্রাসী হামলা এবং ব্যাপক নৃশংসতা শিকার হতে হয়েছে এমনকী তাদের উপাসনালয়ের ভেতরেও।”

বাকস্বাধীনতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি রাষ্ট্রকে অবশ্যই "হিংসা, বৈষম্য এবং শত্রুতা উদ্রেককারী ঘৃণার পক্ষে কথা বলা" নিষিদ্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, "আসুন আমরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াই, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনাকে কাজে লাগায়, কিংবা মানুষের ধর্ম বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে।"

অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কো-অপারেশনের বেশ কয়েকজন সদস্যের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অনুরোধে এই বিতর্কের আয়োজন করা হয়।

সমাবেশে এক ভিডিও বিবৃতিতে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি পবিত্র কুরআনের ইচ্ছাকৃত অবমাননার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, "পবিত্র কুরআন বিশ্ব জুড়ে ২০০ কোটি মুসলমানের জন্য একটি আধ্যাত্মিক নোঙ্গর। এটি তাদের পরিচয় এবং মর্যাদার অনুভূতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।"

তিনি এ অপকর্মের পেছনে যারা জড়িত তাদের জবাবদিহিতার জন্য আহ্বান জানান। নিজেকে বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকারে বিশ্বাসী উল্লেখ করে তিনি বলেন, "বাক স্বাধীনতা যতটা অপরিহার্য, ঠিক ততটাই ঘৃণাত্মক বক্তৃতাও অসমর্থনযোগ্য হওয়া উচিত।"

ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো এলপি মারসুদির মতো অন্যান্য বক্তারাও সেই অনুভূতিরই প্রতিধ্বনি করেন। তিনি সুইডেনসহ কয়েকটি দেশে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, "এই উসকানি সারা বিশ্বের মুসলমানদের প্রচন্ড অপমান করেছে।"

তিনি আরও বলেন, "মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে বৈষম্য সৃষ্টি করার এবং অন্যকে আঘাত করার স্বাধীনতা নয়।"

আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রাশাদ হুসেন, ধর্ম বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে অসহিষ্ণুতা মোকাবেলায় ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যাইহোক, তিনি ঘৃণাত্মক বক্তৃতা নিষিদ্ধ করার জন্য তাদের উদ্যোগে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন, কারণ এটি "প্রায়শই আরও ঘৃণার অনুঘটক হিসাবে কাজ করে।"

কাউন্সিলে উপস্থাপিত একটি খসড়া প্রস্তাবে, "সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশ্যে এবং পূর্বপরিকল্পিত ভাবে পবিত্র কোরআনের অবমাননার " বিষয়ে নিন্দা জানানো হয়, এবং এর জন্য "দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে" আহ্বান জানানো হয়।

প্রস্তাবটিতে হাই কমিশনারকে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সংস্থাটির ৫৪ তম অধিবেশনে "ধর্মীয় ঘৃণার বিভিন্ন চালক, মূল কারণ এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে ‘এর প্রভাবগুলির উপর" একটি মৌখিক আপডেট উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করা হয়; যেগুলো বৈষম্য, শত্রুতা বা সহিংসতাকে প্ররোচিত করে।