ভারতের মহারাষ্ট্রে এনসিপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রবীণ নেতা শরদ পাওয়ারকে সমর্থন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর

ভারতের মহারাষ্ট্রে এনসিপি-র অন্তর্দ্বন্দ্বে প্রবীণ নেতা শরদ পাওয়ারকে সমর্থন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর

ভারতের মহারাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল এনসিপি-র সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার বৃহস্পতিবার ৬ জুলাই রাজধানী দিল্লিতে এনসিপি-র জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের পর ফের জানিয়ে দিলেন, "আমিই দলের প্রধান। আমাকে কেউ হটাতে পারবে না।" ভাইপো তথা এখন মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারের উদ্দেশে কাকা শরদের জবাব, "বয়স আমার ৮২ বা ৯২, যাইহোক না কেন, রাজনীতি করে যাব। এনসিপিকে প্রয়োজনে নতুন করে গড়ে তুলব।" সেই সঙ্গে শরদের ঘোষণা, ‘"বৈঠক করে সংখ্যা দাবি করার ছেলেমানুষি করে লাভ নেই। কে আসল এনসিপি তা ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন।"

বুধবার অজিত কাকা শরদকে তাঁর বয়স নিয়ে খোঁচা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘"তোমার বয়স এখন ৮৩। এবার দলের দায়িত্ব অন্যদের হাতে দিয়ে রাজনৈতিক সন্ন্যাস নাও।" এরপরই নিজেকে এনসিপি-র জাতীয় সভাপতি হিসাবেও ঘোষণা করেন অজিত। তারই জবাব বৃহস্পতিবার দিলেন ৮৩ বছরের ‘মারাঠা স্ট্রং ম্যান’।

পাওয়ার বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি পৌঁছে যান। তারপর ছিল এনসিপি-র জাতীয় কার্যকরী কমিটির বৈঠক। সেখানে চলতি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শেষে পাওয়ারকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে দল পরিচালনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার। গত মঙ্গলবার পাওয়ার, প্রফুল প্যাটেল-সহ আট নেতা যাঁরা রবিবার অজিতের শপথ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তাঁদের এনসিপি থেকে বহিষ্কার করেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় কর্মসমিতি তাতে সায় দিয়েছে।

তবে পাওয়ারের বৃহস্পতিবারের দিল্লি সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি ছিল রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক। গত রবিবার অজিত পাওয়ারের বিদ্রোহের পরই রাহুল দিল্লি থেকে শরদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। প্রবীণ নেতার মুখ থেকে সব কিছু শোনার পর আশ্বাস দেন কংগ্রেস তাঁর পাশে আছে এবং আগের মতোই মহারাষ্ট্র বিকাশ আগারির প্রধান মুখ পাওয়ারই থাকবেন। রাজ্যে জোট রক্ষায় কংগ্রেস বদ্ধপরিকর বলে এনসিপি সুপ্রিমোকে আশ্বাস দেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি।

বৃহস্পতিবার পাওয়ারের বাড়িতে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন রাহুল। কংগ্রেস নেতার এই সিদ্ধান্তকে জোট বার্তা হিসাবেই দেখছে রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের দ্বিতীয় বৈঠকের আগে রাহুলের এই তৎপরতাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে রাজনৈতিক মহল।

গত সপ্তাহে কংগ্রেসের একাংশ পাওয়ারের বিষয়ে খানিক অসন্তোষ প্রকাশ করলেও তার রাশ টেনে দেন রাহুলই। সিমলার পরিবর্তে বেঙ্গালুরুতে বিরোধীদের পরের বৈঠক হতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা করে দেন পাওয়ার। কংগ্রেসের পরিকল্পনা ছিল দিল্লিতে বিরোধী দলগুলির নেতারা একত্রে দিন ঘোষণা করবেন। তাছাড়া পাটনায় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে পাওয়ারের মন্তব্যকেও বিষয়টিকে অনাবশ্যক খুঁচিয়ে তোলা বলেই মনে করছে কংগ্রেসের একাংশ। এ নিয়ে এক-দু’জন নেতা প্রকাশ্যে পাওয়ারের বিরুদ্ধে মুখ খোলা মাত্র রাহুল এবং সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে তাঁদের থামিয়ে দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব জানে পাওয়ারে উপর চোখ-কান বুঝে ভরসা করা যায় না। তবু জোটের স্বার্থে কংগ্রেস নেতৃত্ব চাইছে যাতে কোনওভাবেই জলঘোলা না হয়।