ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অংশীদারিত্ব গণতান্ত্রিক সমতা ও বিতর্কের পারস্পরিক মূল্যবোধের দ্বারা আবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মোদি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রাচীনতম এবং ভারত বৃহত্তম গণতন্ত্র। আমাদের অংশীদারিত্ব গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য শুভ লক্ষণ।"
মোদির মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে উদ্বেগ থাকা স্বত্বেও, যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতারা তার ভাষণকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি মূল সুযোগ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছেন।
হাউজ স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি মোদীর ভাষণের পর একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “আমাদের অংশীদারিত্ব — যা বাণিজ্য, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তাকে বিস্তৃত করে — এর আগে কখনই এতো কাছাকাছি, শক্তিশালী কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। এই শক্ত ভিত্তি থেকে, সবকিছুই সম্ভব। আমি আমাদের দুই মহান জাতির মধ্যে অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য উন্মুখ।"
মোদি যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের বলেন, ভারতের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি নারী নেতৃত্বাধীন উন্নয়ন এবং তরুণ প্রজন্মের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দ্বারা চালিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনে রক্তপাত ও দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হবে।" এছাড়া তিনি "নিরাপদ সমুদ্র দ্বারা সংযুক্ত একটি স্বাধীন, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিকের" গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।
সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা মিচ ম্যাককনেল মোদির সাথে সাক্ষাতের পর এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী বাণিজ্য এবং মৌলিক মূল্যবোধের চেয়ে বরং বেশিই ভাগাভাগী করে নিয়েছে। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিককে স্বাধীন এবং উন্মুক্ত রাখতে আগ্রহী এবং আমরা সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি। কারণ, ভারত চীনের যুদ্ধবাজ আচরণ ভালো করেই বুঝতে পারে।"
হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস চেম্বারের উপরের গ্যালারিগুলি ভর্তি দর্শকদের কাছ থেকে মোদীর বক্তৃতায় বিরতিগুলিতে, "মোদি, মোদি, মোদি" এর উত্সাহী স্লোগানে স্বাগত জানানো হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিসের ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি মোদির স্বীকৃতির পর, কংগ্রেস সদস্যদের কাছ থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ ও জোরালো করতালি পেয়েছেন তিনি।
মোদিই একমাত্র ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, যিনি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের যৌথ সভায় দুবার ভাষণ দেন। কংগ্রেসে তার শেষ বক্তৃতা দেন ২০১৬ সালে। তবে, প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনের অধীনে ২০০৫ সালে মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের ভিত্তিতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক অভিব্যক্তির উপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করার প্রতিবেদনের উল্লেখ করে, এই সপ্তাহের শুরুতে, কংগ্রেসের ৭০ জন সদস্য বাইডেনকে মোদীর সাথে তাঁর বৈঠকে মানবাধিকারের বিষয়ে মূল উদ্বেগ উত্থাপন করার জন্য একটি চিঠি প্রদান করেন।
ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি প্রমিলা জয়পালের নেতৃত্বে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এবং ভারতের জনগণের মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ ও উষ্ণ সম্পর্ক চাই। আমরা চাই যে বন্ধুত্ব শুধুমাত্র আমাদের অনেক অভিন্ন স্বার্থে নয়, অভিন্ন মূল্যবোধের উপরও গড়ে উঠুক।”
চিঠির অংশে লেখা হয়েছে, "আমরা বিশেষ কোনো ভারতীয় নেতা বা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না - এটি ভারতের জনগণের সিদ্ধান্ত - তবে আমরা গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলির সমর্থনে দাঁড়িয়েছি, যা আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতির একটি মূল অংশ হওয়া উচিত।"
মোদির বক্তৃতার আগে, ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি জিম কস্তা ভিওএ-কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থাকলেও মানবাধিকার ইস্যুতে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
তবে, ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি ইলহান ওমর ২০ জুন এক টুইট বার্তায় ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বক্তৃতায় থাকবেন না।
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দমন করেছে, সহিংস হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলিকে উত্সাহিত করেছে এবং দায়মুক্তির সাথে সাংবাদিক/মানবাধিকার সমর্থকদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।"
ওমর বলেছিলেন, তিনি এর পরিবর্তে "মোদির দমন ও সহিংসতার রেকর্ড নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি ব্রিফিং করবেন।"
আরেক ডেমোক্র্যাটিক প্রতিনিধি রাশিদা তালাইবও ঘোষণা করেছেন যে, তিনিও বক্তৃতায় থাকবেন না। উভয় নারীই মুসলিম।