নেই সঠিক পরিসংখ্যান, শিশুশ্রম বিরোধী আইন থাকলেও ভারতে বাড়ছে শিশুশ্রমিক

প্রতীকী ছবি

শিয়ালদহ রেল স্টেশন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় অবস্থিত এই স্টেশন দেশের অন্যতম ব্যস্ত রেল স্টেশনগুলির একটি। রোজ কয়েক লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন এই লাইনের ট্রেন ধরে। স্টেশনের উত্তর গেট দিয়ে বেরিয়ে রাস্তা ধরে একটু হাঁটলেই দুদিকে চোখে পড়বে নানারকমের দোকান। খাবার, জামাকাপড়, জুতো থেকে শুরু করে আরও নানান কিছু রয়েছে সেখানে। শিয়ালদহ ফ্লাইওভারের ঠিক নীচে ভাতের হোটেলে বছর তেরোর মহঃ জুনেইদ-এর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ভগ্ন স্বাস্থ্য, পায়ে জুতো নেই। তার সাথে কথা বলতে শুরু করলে সে জানায়, “আমার বাড়ি মুর্শিদাবাদে (পশ্চিমবঙ্গের ঠিক মাঝামাঝি এক জেলা)। এখানে কাজ করছি দুবছর। আব্বা কাজ করতে পারেন না। বড়ো ভাই আর আমি কাজ করি। দুবেলা খাবার দেয় এখানে, রাতে ৭-৮ জন মিলে মেঝেতে বিছানা পেতে শুতে হয়। থাকা-খাওয়ার পয়সা লাগে না, যা পাই বাড়িতে পাঠিয়ে দিই।” পড়াশোনা নিয়ে জানতে চাওয়ায় প্রথমে হেসে ফেলে। পরে জানায়, “ক্লাস ফাইভ অবধি স্কুলে গিয়েছিলাম, তারপর দাদার সাথে এখানে চলে আসি। আর পড়ব না। দাদাও পড়েনি।” আরেকটু এগিয়ে ঠিক শিয়ালদহ ফ্লাইওভারের শেষপ্রান্তে একটি আসবাবপত্রের দোকানে আলাপ হয় শিমুল মন্ডলের সঙ্গে। দুপুরে স্টিলের আসবাবের দোকানে বিক্রি কম থাকে। মালিক বাড়ি চলে যায়। দোকান সামলায় অন্য এক কর্মচারী ও শিমুল। ষোল বছর বয়স। হিসেব মতো তাঁর মাধ্যমিক দিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ওঠার কথা। সে জানায়, “ক্লাস নাইন-এই পড়া ছেড়ে দিয়েছি। বাড়িতে টান চলছিল। তারপর গ্রামের এক কাকু এই দোকানে কাজ খুঁজে দেয়। দুপুর ও রাতে হোটেলে খেয়ে নিই। দোকান বন্ধ করে মেস বাড়িতে চলে যাই। থাকার খরচ মালিকের। মাসে একবার বাড়ি যাই। বাড়িতে মা-বাবা আর ছোট বোন আছে। ছোট বোন সিক্সে পড়ে।”

শিয়ালদহ রেলস্টেশনের আশেপাশে খেয়াল করলেই প্রচুর সংখ্যক শিশুশ্রমিকদের দেখতে পাওয়া যায়। ‘শিশুশ্রম’ শব্দটি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-র পরামর্শ অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তা হলো: এমন কাজ যা শিশুদের শৈশব, তাদের সম্ভাবনা এবং তাদের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করে এবং এটি শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর। তাদের স্কুলে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা তাদের পড়াশোনায় হস্তক্ষেপ করা; তাদের অকালে বিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য করা; অথবা তাদের স্কুলের উপস্থিতিকে অতিরিক্ত দীর্ঘ এবং ভারী কাজের সাথে একত্রিত করার চেষ্টা করা ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত।

ইউনিসেফ শিশুশ্রমকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করে। ইউনিসেফ-এর পরামর্শ অনুসারে, শিশুর ৫ থেকে ১১ বছর বয়সের মধ্যে, যদি সে দিনে কমপক্ষে এক ঘন্টা অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বা সপ্তাহে কমপক্ষে ২৮ ঘন্টা গৃহস্থালির কাজ করে এবং বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১২ এবং ১৪ বছর বয়সে, সে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৪ ঘন্টা অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ বা কমপক্ষে ৪২ ঘন্টা অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এবং গার্হস্থ্য কাজ করে তাহলে তারা শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত। ইউনিসেফ আরেকটি প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়, “শিশুদের কাজকে ধারাবাহিকভাবে ঘটতে দেখা উচিত, এক প্রান্তে ধ্বংসাত্মক বা শোষণমূলক কাজ এবং অন্যদিকে উপকারী কাজ – তাদের স্কুলিং, বিনোদন এবং বিশ্রামে হস্তক্ষেপ না করে শিশুদের বিকাশ বা উন্নতি করা। এবং এই দুই দিকের মধ্যে রয়েছে কাজের বিস্তৃত ক্ষেত্র যা শিশুর বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।”

ভারতবর্ষেও রয়েছে শিশুশ্রম বিরোধী আইন – শিশু ও কিশোর শ্রম (নিষিদ্ধকরণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮৬ অনুযায়ী, যা ২০১৬ সালে সংশোধন করে (‘সিএলপিআর অ্যাক্ট’) করা হয়েছে, এই আইন অনুযায়ী, একটি ‘শিশু’-কে ১৪ বছরের কম বয়সী ব্যক্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং সিএলপিআর আইন গার্হস্থ্য সাহায্য সহ যেকোনো ভাবে একটি শিশুর কাজ করাকে নিষিদ্ধ করে । শিশুকে যে কোনও কাজে নিয়োগ করা একটি বিবেচ্য অপরাধ। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের ‘কিশোর’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এই আইনটি কিশোর-কিশোরীদের বিপজ্জনক তালিকাভুক্ত পেশা এবং প্রক্রিয়াগুলি ছাড়া অর্থাৎ খনির, দাহ্য পদার্থ এবং বিস্ফোরক সম্পর্কিত কাজ এবং কারখানা আইন ১৯৪৮ অনুসারে অন্য যে কোনও বিপজ্জনক প্রক্রিয়াকে বাদ দিয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়।

২০১১ সালে, জাতীয় আদমশুমারিতে দেখা গেছে যে ভারতে (৫-১৪) বছর বয়সী মোট ২৫৯.৬৪ মিলিয়ন শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ১০.১ মিলিয়ন। যা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩.৯%। ভারতে ৪২.৭ মিলিয়ন শিশু নানান কারণে স্কুলছুট।

নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থীর চিলড্রেন’স ফাউন্ডেশন-এর তথ্য অনুযায়ী ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে শিশুশ্রমিকের হার সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৩০%। তারপর বিহার (১২%), মহারাষ্ট্র (৮%), রাজস্থান (৬%)। গুজরাত এবং ঝাড়খণ্ডে ৫% হারে শিশুশ্রমিক রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও ঝাড়খন্ড রাজ্যের প্রতিটিতে আগামী ২০২৫-এর মধ্যে সারা দেশের শিশুশ্রমিকদের মধ্যে ৫% থাকবে বলে এই সংস্থার সমীক্ষায় উঠে এসেছে।

শিশু শ্রমিকরা দুইভাবে কাজ করে। এক, মূল শ্রমিক এবং দুই, আংশিক সময়ের শ্রমিক। মূল শ্রমিকেরা মূলত ৬ মাস বা তার বেশি সময় ধরে কাজ করছে। আংশিক সময়ের শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা ৬ মাসের কম সময়।

ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী ভারতে ২০১১ সালের জাতীয় আদমশুমারি অনুসারে ১০.১ মিলিয়ন শিশুশ্রমিকের মধ্যে ৫.৬ মিলিয়ন ছেলে এবং ৪.৫ মিলিয়ন মেয়ে। সারা বিশ্বে মোট ১৫২ মিলিয়ন শিশুশ্রমিক রয়েছে। যার মধ্যে ৮৮ মিলিয়ন ছেলে এবং ৬৪ মিলিয়ন মেয়ে।

ভয়েস অফ আমেরিকা-কে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন-এর গবেষণা সংস্থা প্রতীচী-র ন্যাশনাল রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর ও গবেষক সাবির আহমেদ জানিয়েছেন, “শুধু খাওয়া-পরার বিনিময়ে শিশুর-কিশোররা একটি কাজের সুযোগ পাচ্ছে, সেটা আমাদের কাছে খুব চলনসই ব্যাপার হয়ে গেছে। আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কলকাতায় আলিপুর সংশোধনাগারে যে মিউজিয়াম হয়েছে তার ক্যান্টিনে গিয়ে। সেটি সম্পূর্ণভাবে সরকারি। সেখানে ৩ জন ছেলে কাজ করছে যারা বয়সের অনুপাতে শিশু। কিন্তু তাঁদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। একটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা জায়গায় এইরকমভাবে ৩টি ছেলে কাজ করছে সেটা নিয়ে কারোর কোনও মাথা ব্যাথা নেই। কেউ ডেকে তাদের সাথে কথা বলছে না। কারণ এই ছেলেগুলি আমাদের বাড়ির ছেলে নয়। আমাদের মানসিকতা হয়ে আছে এইরকম যে, টাকার বিনিময়ে কাজ করছে। এরা কাজ না করলে সংসার চলবে কী করে এদের। আমরা আসলে বদার্ড নই। এইসব কারণগুলির কারণেই আইন দিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না। কারণ আমাদের মতন মানুষেরা এই নিয়ে কোনও কথা বলেন না। দয়া করে এদেরকে টিপস দিয়ে দিলাম। দায়িত্ব ঝেড়ে ফেললাম কাঁধ থেকে। এর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি না। যখনই কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালানো হয় তখন বাচ্চাদের অভিভাবকরা বা যারা কাজ দিচ্ছেন বা আশেপাশের লোকেরা তারা সাক্ষী ঠিক মতো দেন না, সাক্ষী খুব দুর্বল। ৮-৯ বছর বয়সী বাচ্চাদের, বিশেষত ছেলেদের ক্ষেত্রে বলা হয় ওরা তো ঘরের কাজ করছে বা সামান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ, এইগুলি তেমন কিছু না। এই যে একটা অ্যাকসেপ্টেটেন্স, পরিবারের থেকে এই বাধাগুলি আসার কারণে, আইন থাকা সত্ত্বেও কোনও লাভ হচ্ছে না।”

তিনি আরেকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, আর্থ-সামাজিক পরিস্থতির চাপে শিশুশ্রমের থেকে এখন বেশি চোখে পড়ছে বয়ঃসন্ধির শ্রমিক অর্থাৎ যারা ১৮ বছরের নীচে, কিন্তু একটু বড় হয়েছে। সাবির সমীক্ষা ও গবেষণার জায়গা থেকে বলেন, “শিশুশ্রমিকদের কোনও সঠিক গণনা হয় না। কোনও তথ্য বা কত সংখ্যক শিশুশ্রমিক রয়েছে তা জানার কোনও উপায় নেই, কারণ বয়স নিয়ে একটা উল্টো প্রচার হয়েছে। ১৮-র কম বললেই আইনের ফাঁদে পড়তে হবে সেই ভয়ে যারা কাজে যাচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিক হচ্ছে, যারা কাজে নিচ্ছে সবাই সেই শিশু শ্রমিকের বয়স ১৮ বলছে। অথচ দেখলেই বোঝা যায় বয়স ১৩-১৪। প্রাথমিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষা পোর্টালে তার নাম রয়ে যাচ্ছে, মাধ্যমিকে রেজিস্ট্রেশন-এর আগে পর্যন্ত। অথচ মাঝখানে ড্রপ আউট হয়ে গেলে তা জানা যাচ্ছে না। এরফলেই শিশুশ্রমিকদের কোনও সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। এবং পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু, এসসি, এসটি, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে একটা বড় অংশ এই ১৩-১৫ বছর বয়সী শিশুশ্রমিক। কিন্তু বয়স ভুল নথিভুক্ত হওয়ার কারণে তাদের কোনওভাবে ট্র্যাক করা যাচ্ছে না।” তাঁর কথায় উঠে আসে, পশ্চিমবঙ্গে মেয়ে শিশুশ্রমিকের তুলনায় ছেলে শিশুশ্রমিক পরিযায়ী হওয়ার সংখ্যা বেশি। যদিও ভিন্‌ রাজ্যে গৃহশ্রমিক হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের বহু কন্যাশিশু কাজ করতে যায়, কিন্তু তাদের বয়স বাড়িয়ে বলে তাদের অভিভাবক ও নিয়োগকারী উভয় পক্ষই, ফলে তারা ‘আনডকুমেন্টেড’ রয়ে যায়। সাবির মনে করেন, নাগরিক সমাজকে, গবেষণা ও সমীক্ষাকারী সংগঠনগুলিকে অনেক বেশি উদ্যোগী হয়ে একটা আন্দোলন করতে হবে যাতে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকারের তরফে সংগ্রহ করা হয়, যাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনে তথ্য সংগ্রহ করা ও পাবলিক ডোমেইন-এ তা রিলিজ করা হয়। তাহলে বাস্তবটা উঠে আসবে ও সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। “জনপরিসরে বিষয়গুলি নিয়ে অনেক বেশি আলোচনা করতে হবে। শিশুশ্রমিক দেখলে চুপ করে বসে থাকলে হবে না লেবার ডিপার্টমেন্ট-এ অভিযোগ করতে হবে। স্বচ্ছ ভারতের নামে রেলওয়ে স্টেশন থেকে শিশুশ্রমিক তুলে তো দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা কোথায় যাচ্ছে, আরও হ্যাজার্ডাস কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে – এসব বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। দায়িত্ব সব পক্ষেরই। কেন্দ্র, রাজ্য সরকার, চাইল্ড রাইটস কমিশন, মাইগ্রেন্ট লেবার পরিষদ – সবাইকেই শিশুশ্রম বিষয়ে কাজ করতে হবে,” মত সাবির আহমেদ-এর।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস’-এর উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী বলছেন, “পশ্চিমবঙ্গে চাইল্ড রাইটস কমিশন কমিশন সারা বছর ধরে শিশুশ্রম বন্ধে নানারকম উদ্যোগ নিয়ে থাকে। তারমধ্যে হচ্ছে সচেতনতামূলক র‍্যালি করা। যা গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়। দ্বিতীয়ত, শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দিনে ক্যারাভান বের করা। তৃতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের মোট ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনে নজরদারি করা। যাতে শিশুরা পাচার না হয়ে যেতে পারে বা শিশুশ্রমে নিযুক্ত না হয়। তাদের উদ্ধার করে হোমে পাঠানো হয়, স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় এবং চেষ্টা করা হয় পরিবারকে খুঁজে তাঁদের জানাতে ও সচেতন করতে। তাছাড়া আমাদের কাছে শিশুশ্রমিক দেখলে অভিযোগ জানালে তৎক্ষণাৎ লেবার ডিপার্টমেন্টে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া থাকে। আমরা সব সময়েই শিশুশ্রম বন্ধে সচেতনতা প্রচারের উদ্যোগ নিয়ে থাকি।”

আইন আছে কিন্তু আইনের প্রচুর ফাঁক রয়েছে। এ কারণেই প্রচুর শিশুদের তথ্য সরকারের কাছে নেই। আমরা যা তথ্য পাই তাই সবটা নয়। এর বাইরেও অনেক তথ্য থেকে যায়। ভয়েস অফ আমেরিকা-কে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সোহম ব্যানার্জী জানাচ্ছেন, “১৯৭৯ সালে গুরুপদস্বামী কমিটি গঠনের মাধ্যমে আইনিভাবে শিশুশ্রম নির্মূল করার চেষ্টা ভারতে শুরু হ'লেও‌ তা ফলপ্রসূ না‌ হওয়ার কারণ আইনের ইমপ্লিমেন্টেশন এবং এক্সিকিউশন না হওয়া । আইন একটা সোশিও-ইকনোমিক টুল, ফলত সেটা যতই কড়া হোক না কেন, অনুকূল পরিস্থিতি ব্যতিরেকে খুব একটা কাজে আসে না। শিশুশ্রম বন্ধ করতে গেলে, প্রত্যেকটি শিশুকে সরকারি শিক্ষাদানের আওতায় আনতে হবে, ঠিক যেরকম রিফ্লেক্টস ফ্রম আওয়ার কন্সটিটিউশন। কিন্তু দারিদ্র্যে ধুঁকতে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকের দেশে সেটা ক'রে ওঠার মত পরিকাঠামো এখনো সর্বত্র পৌঁছয়নি । এককথায় বললে, আইনের অক্ষরে কোন ফাঁক না থাকলেও, সেটা লাগু করায় একটা মস্ত বড় ফাঁক থেকে যাচ্ছে, মূলতঃ আর্থ-সামাজিক কারণেই।”