ভারতে ট্রেন দুর্ঘটনার পর প্রিয়জনের মৃতদেহ সনাক্ত করার চেষ্টা করছেন স্বজনরা

ওড়িশার বালাসোরের কাছে তিন ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত এক ব্যক্তির কফিন বহন করছেন হাসপাতালের কর্মীরা। ৫ জুন ২০২৩।

কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে প্রাণঘাতী ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা সোমবার. ভুবনেশ্বর শহরের একটি হাসপাতালে আত্মীয়স্বজনদের মৃতদেহ সনাক্ত করার চেষ্টা করছেন। রেলওয়ে কর্মকর্তারা ঐ ঘটনার তদন্ত চাইছেন। ঐ দুর্ঘটনায় ২৭৫ জন নিহত হয়।

শুক্রবারের এই দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীদের স্বজনরা পূর্বাঞ্চলীয় শহরের অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের বাইরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এদিকে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জীবিতরা বলেছেন, তারা এখনও ভয়াবহ দুর্যোগটি বুঝে উঠতে পারছেন না।

হাসপাতালের বাইরে, দুটি বড় পর্দায় মৃতদেহগুলির ছবি দেখা যাচ্ছিল। মুখগুলি এতটাই রক্তাক্ত এবং পুড়ে গিয়েছে যে সেগুলি খুব কমই সনাক্ত করা যায়।

অনেকে জানিয়েছেন, তারা প্রতিবেশী রাজ্যগুলি থেকে বেপরোয়া ভাবে একাধিক ট্রেন, বাস বা ভাড়া করা গাড়িতে যাত্রা করে মৃতদেহ সনাক্ত করে নিয়ে যাবার জন্য কয়েক দিন অতিবাহিত করেছেন। তৃতীয় দিন পর্যন্ত এই প্রক্রিয়াটি চলে।

বালাসোরে ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২৫ মাইল) দক্ষিণে ওড়িশা রাজ্যের রাজধানীর হাসপাতালে সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা প্রশাসক ময়ূর সূর্যবংশী জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ টি মৃতদেহ সনাক্ত করা হয়েছে এবং ৩৩ টি স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ভুবনেশ্বর হাসপাতালের সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাঃ উৎকল কেশরী সুনা বলেন, "এই প্রথম আমি এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। "এটা খুব কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল। এটা ভয়াবহ। সময় পেরিয়ে গেছে অনেক, অনেক লাশ পচে যেতে শুরু করেছে। তাই তাদের সনাক্ত করা আরও কঠিন হয়ে উঠছে।“

উপেন্দ্র রাম রবিবার প্রতিবেশী বিহার রাজ্য ৩৫০০০ রুপি দিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে থেকে প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তার ছেলে রেতুল রামকে খুঁজতে শুরু করেন। রাম জানান, ১৭ বছর বয়সী রেতুল কাজ খুঁজতে চেন্নাই যাচ্ছিলেন। মৃতদের ছবি দেখার পর সোমবার দুপুরের দিকে রাম তাঁর ছেলেকে সনাক্ত করেন।

শুক্রবারের দুর্ঘটনাটি ছিল ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সিগন্যালিং ব্যর্থতার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি যাত্রীবাহী ট্রেন একটি মালবাহী ট্রেনকে ধাক্কা দিয়ে লাইনচ্যুত হয় এবং সমান্তরাল ট্র্যাকে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সাথে ধাক্কা খায়।