জার্মানিতে কট্টর ডানপন্থী অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে জড়িত আরো তিন সন্দেহভাজন আটক

জার্মানির বার্লিনের ব্রান্ডেনবার্গ ফটকে চরম ডানপন্থী এবং তথাকথিত "রাইখ নাগরিক" এর একটি বিক্ষোভের সময় জার্মান সাম্রাজ্যের আদলের পতাকা প্রদর্শিত হচ্ছে প্রুশিয়ান হেরাল্ডিক ঈগলের সাথে; (ফাইল ফটো) ২০ মার্চ ২০২১।

জার্মানির ফেডারেল প্রসিকিউটর-এর কার্যালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, সরকার উৎখাত করতে, রাইখস বুয়েরগের বা রাইখ সিটিজেন আন্দোলনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত আরো তিন সন্দেহভাজন চরম ডানপন্থীকে আটক করেছে দেশটির ক্রিমিনাল পুলিশ।

জার্মানির ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিধি অনুযায়ী,তিন সন্দেভাজনের পরিচয়ে কেবল জোহানা এফ-জে, হান্স-জোয়াখিম এইচ এবং স্টিফেন ডাব্লিউ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বাডেন-উয়ের্টেমবার্গ রাজ্য থেকে আটক করা হয়।

প্রসিকিউটর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একটি সন্ত্রসী সংগঠনের সদস্য বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে জার্মানির পুলিশ একজন স্বঘোষিত রাজকুমার, একজন অবসরপ্রাপ্ত প্যারাট্রুপার এবং একজন সাবেক বিচারকসহ ২৫ জনকে আটক করে। সহিংস উপায়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করারা অভিযোগে তাদের আটক করা হয়।

রাইখ সিটিজেন মুভমেন্টের অনুসারীরা জার্মানির যুদ্ধোত্তর সংবিধান প্রত্যাখ্যান করে এবং সরকার উৎখাতের আহ্বান জানায়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, সোমবার সন্ধ্যায় আটক তিন সন্দেহভাজন অভ্যুত্থান চেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত ছিলেন। সন্দেহ করা হচ্ছে, জোহানা এফজে ২০২২ সালের মে মাস থেকে ঐ সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। তিনি নেতৃস্থানীয় সদস্যদের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। বৈঠকগুলোতে গোষ্ঠীটির লক্ষ্য এবং সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া, তিনি একজন রুশ কনসাল জেনারেলের সাথে যোগাযোগ করেছন এবং পরে তার সাথে দু'বার দেখা করেন। প্রসিকিউটররা বলছেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্যই তিনি এই সাক্ষাৎ করেছেন।

হান্স-জোয়াখিম এইচ শুরু থেকেই এই গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন বলে সন্দেহ করা হয়।তিনি এই গোষ্ঠীকে মোট ১ লক্ষ ৫১ হাজার ডলারেরও বেশি অর্থ প্রদান করেছেন।এ ছাড়া তিনি নতুন সদস্য সংগ্রহ ও তথাকথিত পৃষ্ঠপোষক সংগ্রহের ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠকগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন।

প্রসিকিউটররা আরো বলেন, স্টিফেন ডাব্লিউ এই সংগঠনে যোগ দিয়েছেন ২০২২ সালের জুলাইয়ের আগে। সন্দেহ করা হয়, তিনি একটি তথাকথিত হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কোম্পানিতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় রয়েছেন; সেখানে তিনি একজন সামরিক কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন। এই অভিযুক্ত ব্যক্তি বেশ কিছু সমন্বয়-সভায় অংশ নিয়েছেন বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। তার কাজ ছিলো, তার দায়িত্বের আ্ওতায় সদস্য সংগ্রহ এবং তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া।

জার্মান নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, সরকারি কর্মকর্তা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং এমনকি জাতীয় পার্লামেন্টে হামলা সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিয়েছে।এই ষড়যন্ত্র করেছিলো রাইখ সিটিজেন মুভমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলো।

সোমবার এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জার্মানির অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান সরকারবিরোধী চরমপন্থা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সতর্ক করেছেন। থমাস হালডেনওয়াং বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, “যেসব অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্র গত বছর দেখা গেছে, সেগুলোই শেষ নয়। এখন এক্স-ডে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, এসময় অবশ্যই কিছু ঘটতে পারে।” তিনি বলেন, “আমরা এ ধরনের প্রচেষ্টা গুলো অত্যন্ত নিবিড়ভাবে, খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। আমি নিশ্চিত, আমরা অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে সময়মতো এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হব। তবে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর নজরদারি সত্বেও কিছু গোষ্ঠী যে সৃষ্টি হবে না, সে সন্দেহ আমি পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারি না।“