হিরোশিমায় আসন্ন জি-সেভেন সম্মেলনে ইউক্রেন ও এশিয়ার উত্তেজনা প্রসঙ্গ প্রাধান্য পেতে পারে

হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে দর্শনার্থীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন (১৭ মে, ২০২৩)

বিশ্বের ধনী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতারা যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ও এশিয়ায় বাড়তে থাকা উত্তেজনার মতো সমস্যাগুলো মোকাবিলার বিষয়ে আলোচনা করতে জাপানের হিরোশিমায় বৈঠকে বসবেন, তখন তা এক মর্মান্তিক যুদ্ধ ও তার পরিণতির কথা সবাইকে মনে করিয়ে দেবে।

মাত্র কয়েকদিন আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি এক ঝটিকা সফরে গ্রুপ অফ সেভেন (জি-৭) দেশগুলোর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে দেখা করে এ সম্মেলনে যোগ দিতে জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন, যার ফলে এ সম্মেলনে ইউরোপের যুদ্ধের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। জেলেন্সকির এ সফরের উদ্দেশ্য ছিল তার দেশের অস্ত্রসম্ভারকে আরও সমৃদ্ধ করা এবং মস্কো বাহিনীর দখলে থাকা ভূখণ্ড মুক্ত করার বহুল প্রতীক্ষিত প্রতি-আক্রমণ শুরুর আগে রাজনৈতিক সমর্থন যোগাড় করা।

একইসঙ্গে, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় জি-সেভেন নেতারা এশিয়ায় নতুন করে সংঘাতের আশংকা করছেন, এবং তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নেতারা অন্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রাধান্য নিয়ে ক্রমশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন এবং আশঙ্কা করছেন, চীন বল প্রয়োগ করে তাইওয়ানের দখল নেওয়ার চেষ্টা করবে। যার ফলে আরও বিস্তৃত আকারে সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে। চীন এই স্বশাসিত দ্বীপকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করে এবং এর কাছাকাছি জায়গাগুলোতে নিয়মিত জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠায়।

হিরোশিমার সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পারমাণবিক বিস্তারের ঝুঁকির প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, হিরোশিমা পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হওয়া শহর।

জি-সেভেন সদস্যরা হল যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, ইতালি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

হিরোশিমায় জি-সেভেন সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদার পরিবার এ শহর থেকে এসেছে। তিনি আশা করছেন, এখানে সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে “বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার” প্রতি জাপানের অঙ্গীকারের প্রকাশ ঘটবে এবং “পারমাণবিক অস্ত্রবিহীন পৃথিবীর ধারণা বাস্তবায়নের পথে” গতিবেগের সঞ্চার হবে। তিনি অনলাইন সংবাদের ওয়েবসাইট জাপান ফরোয়ার্ডে এ কথাগুলো লিখেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় একটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে, যার ফলে শহরটি ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তার ৩ দিন পর দেশটি নাগাসাকিতে দ্বিতীয় বোমা নিক্ষেপ করে এবং আরও ৭০ হাজার মানুষ মারা যান। ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এশিয়ায় জাপানের পক্ষ থেকে কয়েক দশক ধরে চলমান আগ্রাসনের অবসান ঘটে।

হিরোশিমার বিস্ফোরণের পরেও নদীর ধারের কিছু দালানের অবশিষ্টাংশ আজও টিকে আছে। এসব দালানকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে পিস মেমোরিয়াল পার্ক। জি-সেভেন নেতারা এই পার্ক পরিদর্শনে যাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।