মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সৈন্যরা দেশটির মধ্যাঞ্চলের একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে চার শিশুসহ ১৯ গ্রামবাসীকে হত্যার পর, তাদের মরদেহ পুড়িয়ে দিয়েছে। স্বাধীণ সংবাদ মাধ্যম এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এ কথা জানিয়েছে।
বাগো অঞ্চলের হাততাবিন বসতির নিয়াং পিন থার গ্রামে বুধবার এই হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়।সেনা শাসন বিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর হামলার প্রতিশোধ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে গঠিত পিপলস ডিফেন্স ফোর্স-এর এক সদস্যের বরাত দিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত সংবাদ সংস্থা রেডিও ফ্রি এশিয়া, জানিয়েছে, তার দল এবং তাদের জোট সদস্য কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সাথে সেনাবাহিনীর লড়াইয়ের পর, একই দিন এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। কারেন ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি হলো এই এলাকায় সক্রীয় একটি জাতিগোষ্ঠী ভিত্তিক বিদ্রোহী দল। পিপলস ডিফেন্স ফোর্স-এর এই সদস্য আরো জানান, প্রতিরোধ বাহিনী ২০ সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে; আর তিন অফিসারকে আটক করেছে।
নিয়াং পিন থার গ্রামের এক কৃষক অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-কে বলেন, প্রায় ১০ জন সৈন্যের অভিযানে তিনি তার স্ত্রী, সাত বছরের মেয়ে এবং আরো নয় আত্মীয়কে হারিয়েছেন। ১৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তার অনুমান, পেট্রোল ও ডিজেল ঢেলে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার আগে সবার মাথায় গুলি করা হয়েছিলো। এই জ্বালানি তেল সংগ্রহ করা হয় গ্রামের একটি দোকান থেকে। সৈন্যরা কিছু বিয়ার ও অ্যালকোহলিক পানীয়ও নেয় এই দোকান থেকে, পরে তারা তা পান করে।
নিহতদের দেহাবশেষের ছবি ও ভিডিওচিত্রসহ হত্যাকাণ্ডের খবর শুক্রবার মিয়ানমারের স্বাধীন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।একই দিনে,একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক দল প্রতিবেদনে প্রকাশ করে অভিযোগ করে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, তাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত দল ও জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে, ইচ্ছাকৃতভাবে শিরশ্ছেদসহ বিভিন্ন নৃশংসতা চালাচ্ছে।জনগণ ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর বর্বরতায় হতাশা বোধ করছে।
মানবাধিকার সংগঠন মিয়ানমার উইটনেস, মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং-এ নৃশংসতার জন্য ওগ্রে কলাম নামে পরিচিত একটি সেনা ইউনিটকে চিহ্নিত করেছে। এই অঞ্চল মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলে বিবেচিত।
সাগাইং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা দলগুলোর শক্ত ঘাঁটি। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করে নেয় সামরিক বাহিনী।এর পর ব্যাপক অহিংস বিক্ষোভ শুরু হলে,ব্যাপক বল প্রয়োগের মাধ্যমে তা দমন করা হয়।এর ফলে, সারা দেশে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়।