মিয়ানমারের রাখাইন পরিদর্শন করেছে প্রতিনিধি দল, রোহিঙ্গাদের দাবি নাগরিকত্ব

টেকনাফে তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনকে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করার পর, নৌকায় করে ফিরে আসছেন কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী এবং বাংলাদেশী কর্মকর্তারা। ৫ মে, ২০২৩।

রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল শুক্রবার (৫ মে) মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করেছে। প্রতিনিধি দল ফিরে আসার পর, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন দুই রোহিঙ্গা নেতা এবং প্রতিনিধি দলের প্রধান শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে তাদের নাগরিত্ব ফিরে পাওয়ার দাবি জানান।

মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “ বাংলাদেশের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। সে নিরিখে মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিলো; যারা প্রত্যাবাসিত হবে, সে সকল রোহিঙ্গাদের যেন মিয়ানমারের পক্ষ থেকে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা দেখানো হয়। সে নিরিখে আমরা এই পর্যবেক্ষণের নাম দিয়েছিলাম ‘গো অ্যান্ড ভিজিট’।”

তিনি আরো বলেন, “মিয়ানমার প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। আমরা ২০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমারের মংডুর আশেপাশে, যেখানে তাদের জন্য স্থান ঠিক করা হয়েছে, সেগুলো দেখার পর আমরা ফেরত আসলাম। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছা দেখেছি। আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাই।”

কমিশনার বলেন, “আমাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা ছিলেন। মূলত তাদের জন্যই এই আয়োজন। তারা প্রত্যাবাসিত হবে, তাদেরকে স্বচক্ষে সেখানকার পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ব্রিফ করেছে, বিভিন্ন জায়গা দেখিয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এখানে আসবে। রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আরো কথা বলবে। সবকিছু করা হয়েছে তাদের আস্থা বৃদ্ধির জন্য, তাদের আশ্বস্ত করার জন্য।”

“মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল আসার পর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, “মংডু শহরে প্রচুর রোহিঙ্গা আছে। আমি যতটুকু তথ্য নিলাম সেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ রোহিঙ্গা ব্যবসা করছে। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।”

প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা সদস্য ও ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “অনেক বছর পর আমাদের দেশ মিয়ানমার দেখার সুযোগ হয়েছে। আমরা মিয়ানমার গেছি, আমাদেরকে ক্যাম্পগুলো দেখিয়েছে। আমরা জানতে চাইলাম, ক্যাম্প কেন, কার জন্য? তারা বলেছে, আপনাদের জন্য। আমরা বলেছি, আমরা যদি সিকিউরিটি না পাই, নাগরিকত্ব কার্ড না পাই তাহলে কি হবে। তখন তারা জানিয়েছে, এনভিসি কার্ড নিতে হবে। আমরা বলেছি এনভিসি কার্ড অতিথিদের জন্য, আমাদের এনভিসি কার্ড নেয়া মানে আমরাও অতিথি বা মেহমানের মতো। এক্ষেত্রে আমরা কোনো জমির মালিক হতে পারব না, নাগরিকত্ব পাব না।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা দাবি করেছি, আমাদের গ্রামে আমাদের ভিটা-জমি ফিরিয়ে দিতে। তখন আমরা নিজেদের টাকায় ঘর তৈরি করে থাকবো। আমাদের শেষ কথা হয়েছে যে আমাদের নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব, ভিটে-মাটি না দিলে আমরা মিয়ানমার ফিরে যাব না।”

প্রতিনিধি দলের সদস্য ও ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা সুফিয়ান বলেন, “সেখানে গিয়ে আমরা আমাদের দাবি দিয়েছি। আমাদের নাগরিকত্ব দাবি করেছি, ভিটামাটি দাবি করেছি, সেগুলো ফেরত দিলে আমরা যাব, সেটা জানিয়ে এসেছি। আমাদের গ্রামের জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছি, কিন্তু সেখানে যাওয়ার মতো এখনো কোনো সুযোগ দেখছি না। আমরা এখানে (বাংলাদেশে) থেকেই দাবি আদায় করে তারপর মিয়ানমার ফিরতে চাই।”

উল্লেখ্য, এর আগে বাংলাদেশ থেকে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার একটি তালিকা পাঠানো হয় মিয়ানমারের কাছে। সেই তালিকা থেকে ফেরত নিতে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম দফায় প্রায় এক হাজার ১৪০ জনকে নির্ধারণ করে মিয়ানমার।