আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শেখ হাসিনা ও কিশিদার আলোচনা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (এল) এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা টোকিওতে তার সরকারি বাসভবনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন। ২৭ এপ্রিল,২০২৩। (ছবি: কিমিমাসা মায়ামা/পুল/এএফপি)

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা একমত পোষণ করেছেন যে, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী বাস্তুচ্যুতি স্বাগতিক সম্প্রদায়ের ওপর বোঝা বাড়াবে এবং এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে। তাঁরা এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই সংকটের চূড়ান্ত সমাধান হিসেবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ‘টেকসই, নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ’ প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বুধবার (২৬ এপ্রিল) শেখ হাসিনা ও ফুমিও কিশিদা বৈঠককালে এই মত পোষণ করেন।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার দ্রুত প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি ভাসানচরে পুনর্বাসিতদের জন্য প্রথম দেশ হিসেবে জাপানের মানবিক সহায়তাসহ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য দেশটির সহায়তার জন্য তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী কিশিদা বাংলাদেশের প্রতি জাপানের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে প্রায় ২৩০ কোটি (২.৩ বিলিয়ন) ইয়েন প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করে ভাসানচরসহ আয়োজক সম্প্রদায় ও বাস্তুচ্যুতদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

দুই প্রধানমন্ত্রীই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পর তাদের আত্মনির্ভরশীল জীবনের জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের মতো যথাযথ সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

কিশিদা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য জাপানে শিক্ষার সুযোগ প্রদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা ও কিশিদা মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং সহিংসতা ও সশস্ত্র সংঘাত বন্ধ, আটকদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।

তাঁরা মিয়ানমারে একটি সমাধান খুঁজতে আসিয়ান প্রচেষ্টার প্রতি তাঁদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এ বিষয়ে আসিয়ান চেয়ারের সক্রিয় সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন। তাঁরা আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্য জরুরিভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশগুলো মিয়ানমারের পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত প্রভাবের সম্মুখীন হওয়ায় তাঁরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল পদক্ষেপের দাবি জানান।

কিশিদা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের অব্যাহত মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।

উল্লেখ্য, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে শেখ হাসিনা বর্তমানে জাপানে সরকারি সফরে রয়েছেন এবং বুধবার (২৬ এপ্রিল) একটি শীর্ষ বৈঠক করেছেন।