সমস্যা সংকুল আফগানিস্তানকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করার জন্য এই সপ্তাহে আঞ্চলিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশ থেকে নতুন উদ্যোগের পথে সামান্যই অগ্রসর হয়েছে, কিন্তু অংশগ্রহণকারী কাবুলের বেশ কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্র দেশটির অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের দায়ী করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্য এশিয়ার একজন কূটনীতিক ভিওএ-কে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে আয়োজিত ওই বৈঠকের ভিতরের কিছু বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বৈঠকে, যুক্তরাষ্ট্রকে "একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন দেশ হিসাবে চিত্রিত করে বলা হয়েছে, দেশটি গত দুই দশক ধরে আফগানিস্তানকে ধ্বংস করেছে এবং এখন তারা সেই ক্ষতি পূরণ করতে অস্বীকার করছে।" বৈঠকে আফগানিস্তান ছাড়াও, চীন, রাশিয়া, ইরান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের চ্যানেল টেলিগ্রামেও একই বার্তা প্রতিফলিত হয়। চ্যানেলটি বলেছে, অংশগ্রহণকারীরা "জোর দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেটো মিত্রদের ২০ বছরের সামরিক অভিযানে আফগানিস্তানের যে ক্ষতি হয়েছে, তার জবাবদিহি করতে হবে। তাদের ওই অভিযানের ফলেই দেশটিতে আজ এই ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে।"
পররাষ্ট্র মন্ত্রক জোর দিয়ে বলে, "সংঘাত-পরবর্তী আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলির উচিত প্রধান আর্থিক বোঝা বহন করা।" মস্কো পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আটকে থাকা আফগানিস্তানের জাতীয় সম্পদ অবিলম্বে অবমুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, "দেশটির মানবিক সংকট সমাধানের জন্য ওই সম্পদ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
আয়োজক দেশ উজবেকিস্তান, তার বিবৃতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমালোচনা এড়িয়ে যায়। কিন্তু মানবিক সহায়তা প্রদান এবং আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য একটি যৌথ প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দলগুলো তালিবানের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রধান দাবিগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করেছে, "বিশেষ করে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠন, আফগান নারীদের কাজ করার ও শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিশ্চিত করা।"
উজবেকিস্তান আফগানিস্তানকে মধ্য এশিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে এবং দেশটিকে মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়াকে সংযুক্ত করার চাবিকাঠি হিসেবে দেখে।
মধ্য এশিয়ার আফগানিস্তানের সাথে দীর্ঘতম সীমান্ত রয়েছে তুর্কমেনিস্তানের। দেশটি প্রকাশ্য কোন মন্তব্য করেনি।
বৈঠকে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রতি তেহরান তার স্বভাবসুলভ অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেছেন, পশ্চিমের উচিত "এই দেশে কয়েক দশক ধরে চালানো ধ্বংসের দায় স্বীকার করা এবং এর ক্ষতিপূরণ দেওয়া। আঞ্চলিক দেশগুলোর বিরুদ্ধে সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে কিছুতেই ব্যবহার করা যাবে না।”
পাকিস্তানের প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার আফগান জনগণকে সাহায্য করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
পশ্চিমা সরকারগুলি প্রকৃতপক্ষে আফগানিস্তানে ত্রাণ প্রচেষ্টায় অবদান রেখে চলেছে। তারা তালিবান প্রশাসনকে সরাসরি অর্থায়ন না করে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির মাধ্যমে সেই সাহায্যের অর্থ জোগাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যে তারা ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ১১০ কোটি ডলারেরও বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে।
সম্মেলনের পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং সাংবাদিকদের বলেন, আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী প্রত্যাহার, একটি অনেক বড় কৌশলগত ব্যর্থতা।
শুক্রবার জারি করা একটি যৌথ সমরকন্দ ঘোষণায়, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশ গুলো এবং রাশিয়া "সন্ত্রাসবাদ এবং মাদক পাচারের হুমকি থেকে মুক্ত, একটি শান্তিপূর্ণ, ঐক্যবদ্ধ, সার্বভৌম এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আফগানিস্তানের উন্নয়নে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।"