নগদ অর্থসংকটে পড়া পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে একটি মূল চুক্তি সম্পাদনের এখনও কোনও দিন ক্ষণ নির্ধারিত হয়নি, যে চুক্তির ফলে ১.১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পাবার আশা করছে দেশটি। আইএমএফ বলেছে, ঋণটি প্রায় পাকাপোক্ত হতে চলেছে, তবে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তাদের হাতে আর মাত্র চার সপ্তাহের মতো আমদানির অর্থায়নের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে।
এদিকে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার শুক্রবার টুইট করে বলেছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত আইএমএফ-কে পাকিস্তানকে ১০০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং রাষ্ট্রীয় ব্যাংক সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আমানত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রও সংগ্রহ করছে।
শুক্রবার দারের টুইটের পর মনে হচ্ছে, পাকিস্তান আইএমএফ-এর তহবিল প্রাপ্তির খুব কাছাকাছি, কিন্তু স্টাফ-লেভেল চুক্তির জন্য কোনও তারিখ এখনো দেখা যাচ্ছে না।
এছাড়াও শুক্রবার, আইএমএফ-এর মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া বিভাগের পরিচালক জিহাদ আজর বলেন, দেশটির টেকসই প্রবৃদ্ধি উন্নীত করার জন্য দুই অঙ্কের মুদ্রাস্ফীতি পরিচালনা এবং মুদ্রানীতি বজায় রাখতে হবে।
আজুর বলেন, "পাকিস্তান আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রান্তিকালে রয়েছে এবং অর্থনীতির সংস্কার ও স্থিতিশীলতার জন্য দেশটির একটি নিষ্পত্তিমূলক পদক্ষেপ আশু প্রয়োজন।"
এই সপ্তাহে পাকিস্তানের জন্য ২৭% মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ এবং আসন্ন বছরে দরিদ্র দেশটির প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস মাত্র ০.৫% । জ্বালানি ও পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দেশটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মার্চ মাসে, খাবারের খরচ এক বছরের আগের তুলনায় প্রায় ৫০% বেশি হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে কিছু অর্থনীতিবিদ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা আশংকা করছেন, দেশটির ঋণ সমস্যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের উপর গিয়ে পড়বে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আটলান্টিক কাউন্সিলের পাকিস্তান ইনিশিয়েটিভের পরিচালক উজাইর ইউনুস ভিওএ-কে বলেছেন, "চলমান সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে, সম্ভবত, শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের ঋণ পুনর্গঠনের প্রয়োজন হবে, তবে তা সাধারণ নাগরিকদের আরও বেশি যন্ত্রণায় ফেলে দেবে।"
ইউনুস বলেন, "পাকিস্তানে অচিরেই কিংবা যত দ্রুত সম্ভব একটি শক্তিশালী সংস্কার রোডম্যাপের প্রয়োজন হবে, যাতে আবারো দেশটিকে ঋণ দিতে বা ঋণ পুনর্গঠনের পথে যেতে দাতারা রাজি হয়।"
এই সপ্তাহে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বলেছেন, তহবিলটি নিশ্চিত করার জন্য তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে, যাতে করে পাকিস্তানের যে নীতি কাঠামো রয়েছে, তাতে করে দেশটির ঋণ টেকসই হয়।
আন্তর্জাতিক ক্রেডিট এজেন্সিগুলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এই বছর ঋণ খেলাফির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় আছে পাকিস্তান। কারণ কোভিড মহামারীর কবলে পড়া দেশটি অর্থনৈতিক পতন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
গত মাসে লন্ডন-ভিত্তিক ফিচ রেটিং গ্রুপ বলেছে, বর্তমানে রেকর্ড পাঁচটি ফিচ-রেটেড সার্বভৌম দেশ ঋণ খেলাফির অবস্থায় রয়েছে: দেশগুলো হচ্ছে, বেলারুশ, লেবানন, ঘানা, শ্রীলঙ্কা এবং জাম্বিয়া।