বিতর্কিত এশীয় সাগরের সামরিকায়নে কোয়াড ভুক্ত দেশগুলোর উদ্বেগ প্রকাশ

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর নয়াদিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে কোয়াড মন্ত্রীদের প্যানেলে অংশ নেন (বাঁ থেকে); ৩ মার্চ, ২০২৩।

পরোক্ষভাবে চীনকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া এক বার্তায় কোয়াড ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা শুক্রবার, দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলগুলোতে সামরিকায়নে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বেইজিং যখন বিতর্কিত সামুদ্র অঞ্চলের ওপর তাদের দাবি উত্থাপন করছে, তখন নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের শীর্ষ কূটনীতিকরা বৈঠক করেন।বৈঠকে তারা, ইন্দো-প্যাসিফিক (ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয়) অঞ্চলে চীনের এমন ক্রমবর্ধমান দাবির কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

চীনের নাম উল্লেখ না করে কোয়াড বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “বিতর্কিত অঞ্চলের সামরিকায়ন, কোস্টগার্ড জাহাজ ও সামুদ্রিক মিলিশিয়াদের বিপজ্জনক ব্যবহার এবং অন্যান্য দেশের উপকুলের সম্পদ আহরণ কার্যক্রম ব্যাহত রাখার প্রচেষ্টায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।“

চীন প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর তাদের সার্বভৌমত্ব দাবি করে। আর, এ কারণে, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সাথে চীনের বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া, চীন বিতর্কিত জলসীমায় নির্মিত দ্বীপগুলোতে সামরিক ঘাঁটিও স্থাপন করেছে।

কোয়াড নিজেকে একটি কৌশলগত ফোরাম বলে অভিহিত করছে। তবে, বেইজিং এই জোট গঠনকে কৌশলগত ও সামরিক মিত্রদের নিয়ে চীনকে ঘিরে ফেলার জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।

চীন শুক্রবার আবারো কোয়াডের সমালোচনা করেছে। বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, “আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর এই সহযোগিতা উদ্যোগ, শান্তি ও উন্নয়নের বিষয়ে সময়ের দাবিকে নিশ্চিত করবে। তারা কোনো একচেটিয়া চক্র গড়ে তুলবে না।”

মাও নিং আরো বলেন,“আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এমন কিছু করবে, যা হবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা ও পারস্পরিক বিশ্বাস উন্নয়নের জন্য সহায়ক।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জোর দিয়ে বলেন যে দেশগুলো পরস্পরকে সহায়তা করার লক্ষ্যে কাজ করছে। তিনি বলেন, “এটা কোনো সামরিক জোট নয়। এটা সে রকম কোন জোট নয়।” ব্লিংকেন বলেন, “কোয়াড অন্য দেশগুলোকে, তাদের অথবা বেইজিং-এর মধ্যে কোনো একটাকে বেছে নিতে বলছে না।”

একই ধরনের বার্তা এসেছে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের পক্ষ থেকে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেন, “কোয়াড কোনো নিরাপত্তা বা সামরিক বিষয়ের জন্য নয়।”

ইউক্রেনে রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকির প্রসঙ্গে কোয়াড দেশশমুহের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিবৃতিতে বলা হয়, "পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকি অগ্রহণযোগ্য"। তারা "আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একটি বিস্তারিত, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়ী শান্তির" আহ্বান জানিয়েছে।

চীন ও রাশিয়ার আপত্তির মুখে, ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা জানিয়ে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথ বিবৃতি দিতে ব্যর্থ হন। এর একদিন পর, ভারতের রাজধানীতে কোয়াডের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।