বাইডেন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিরুদ্ধে প্রায় ১ বছর ধরে চালানো আগ্রাসনে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” করেছে। শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস এ কথা জানান।
কামালা হ্যারিস বলেন, “এবং আমি তাদেরকে বলছি, যারা এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যারা এসব অপরাধে সম্মতি দিয়েছে, তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে”।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের আইনি বিশ্লেষণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি নিরূপণ করা হলেও, চলমান যুদ্ধে এর কোন তাৎক্ষনিক প্রভাব পড়বে না। তবে ওয়াশিংটন আশা করছে, এটি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আরও বেশি একঘরে করবে এবং আইনি উদ্যোগকে আরও গতিশীল করবে।যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক আদালত ও বিধিনিষেধ প্রয়োগের মাধ্যমে পুতিন সরকারের সদস্যদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা যাবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের চলমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে মিউনিখে পশ্চিমের জ্যেষ্ঠ নেতারা যখন সম্মেলন করছেন, তখনই কামালা হ্যারিসের এই বক্তব্য আসলো।
ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছে, রুশ বাহিনীর সদস্যরা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত। জাতিসংঘও এ বিষয়ে তদন্ত করছে। তবে রাশিয়ার এসব পদক্ষেপকে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে “মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে রুশ কর্মকাণ্ডের আইনি বিশ্লেষণের দরকার পড়বে।খতিয়ে দেখতে হবে যে তাদের কর্মকাণ্ড ব্যাপক, নিয়মতান্ত্রিক এবং ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের মতো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এগুলোকে আরো মারাত্মক অপরাধ বলে দেখা হয়।
জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ইউক্রেন বিষয়ক তদন্ত কমিশন বলেছে যে তারা কিছু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ চিহ্নিত করেছে; তবে, এগুলোকে এখনো যুদ্ধাপরাধের ঘটনা বলে নিশ্চিত করছে না তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার জানিয়েছে যে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)এর সহায়তা প্রাপ্ত সংগঠনগুলো আগ্রাসন শুরুর পর থেকে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি যুদ্ধাপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
রাশিয়ার ভাষ্যমতে, তারা রুশ নিরাপত্তার প্রতি হুমকি নিরসনে এবং ইউক্রেনের বসবাসকারী রুশ ভাষাভাষীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য “বিশেষ সামরিক অভিযান” চালাচ্ছে। দেশটি, ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বাইডেন প্রশাসন অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের তদন্তকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিধিনিষেধ আরোপ, ভিসা না দেওয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধাপরাধ আইনের আওতায় শাস্তি দেওয়া।
এসব উদ্যোগের পেছনে ওয়াশিংটন এ যাবত ৪ কোটি ডলার খরচ করেছে। প্রশাসন জানিয়েছে, কংগ্রেসের কাছ থেকে আরও ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের অনুমোদন পাওয়ার জন্য কাজ চলছে।তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, বিশেষ করে রাশিয়ার ভেতরে এ ধরনের উদ্যোগের বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ক্ষমতা সীমিতি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ ইউক্রেন থেকেও আলামত সংগ্রহ ও প্রমান করা খুবই দুষ্কর।