ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস সমকামিতাকে "অন্যায়" বলে অপরাধী করে, এমন আইনের সমালোচনা করে বলেছেন, ঈশ্বর তার সমস্ত সন্তানকে, ঠিক তারা যেমনটি, তেমনটির মতোই তাদের ভালোবাসেন। ক্যাথলিক বিশপ, যারা আইনটি সমর্থন করেন. তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, যেন তারা এলজিবিটিকিউ বা সমকামী সম্প্রদায়ের লোকদের গির্জায় স্বাগত জানান।
মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এপি’র সাথে এক সাক্ষাত্কারে পোপ বলেন, "সমকামী হওয়া কোন অপরাধ নয়।"
ফ্রান্সিস স্বীকার করেছেন, বিশ্বের কিছু কিছু অংশে ক্যাথলিক বিশপরা এমন আইন সমর্থন করেন, যা সমকামিতাকে অপরাধী হিসেবে গণ্য করে কিংবা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্য সৃষ্টি করে। তবে তিনি এই বিষয়টিকে একটি "পাপ কাজ" বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি সাংস্কৃতিক পটভূমিতে এই ধরনের মনোভাবকে দায়ী করে বলেন, প্রত্যেকের মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশেষ করে বিশপদের একটি পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
দ্য হিউম্যান ডিগনিটি ট্রাস্টের মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৭টি দেশ কিংবা বিচারব্যবস্থায় সম্মতিমূলক সমকামী যৌন কার্যকলাপকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, এর মধ্যে ১১টি দেশে মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তির বিধান আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেখানে আইন প্রয়োগ করা হয় না, সেখানেও এলজিবিটিকিউ লোকেদের বিরুদ্ধে কলঙ্ক, সহিংসতা এবং হয়রানির অন্ত নেই। দ্য হিউম্যান ডিগনিটি ট্রাস্ট এই ধরনের আইনের অবসান ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে, ২০০৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সেগুলিকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা সত্ত্বেও, এখনও এক ডজনেরও বেশি রাজ্যে তাত্ত্বিক ভাবে অ্যান্টি-সোডোমি আইনের উল্লেখ রয়েছে। সমকামী অধিকারের প্রবক্তারা বলেছেন, পুরানো আইনগুলি সমকামীদের হয়রানি করার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং নতুন আইন যেমন ফ্লোরিডায় "সমকামী বলবেন না" । প্রমাণ হিসেবে এই আইন প্রসঙ্গে বলেন কিন্ডারগার্টেনে তৃতীয় শ্রেণীর মাধ্যমে যৌন অভিমুখিতা এবং লিঙ্গ পরিচয় সম্পর্কে নির্দেশনা নিষিদ্ধ করার কথাবলা হয়েছে, যা এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের জনগণকে এক ঘরে করার একটা অব্যাহত প্রচেষ্টা।
জাতিসংঘ বারবার সমকামিতাকে অপরাধ বলে উল্লেখ করা আইনের অবসানের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এই আইন গোপনীয়তা এবং বৈষম্য থেকে মুক্তির অধিকার লঙ্ঘন করে এবং তা যৌন অভিমুখ বা লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে সকল মানুষের মানবাধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে দেশগুলির বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন।
এই জাতীয় আইনগুলিকে "অন্যায়" ঘোষণা করে ফ্রান্সিস বলেন, ক্যাথলিক চার্চ এই আইনের অবসান ঘটানোর জন্য কাজ করতে পারে এবং করা উচিত। "এটা অবশ্যই করতে হবে। এটা অবশ্যই করতে হবে" বলে তিনি এক-ই কথার পুনরাবৃত্তি করেন।
ফ্রান্সিস ক্যাথলিক চার্চের প্রশ্নোত্তর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, সমকামীদের অবশ্যই এখানে স্বাগত জানাতে হবে এবং তাদের যথাযথ সম্মান করতে হবে। তাদের একঘরে করে রাখা কিংবা তাদের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়।
পোপ ফ্রান্সিস আরও বলেন, সমকামিতার ক্ষেত্রে অপরাধ এবং পাপের মধ্যে পার্থক্য করা দরকার।
২০০৮ সালে ভ্যাটিকান জাতিসংঘের একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ওই ঘোষণাতে জাতিসংঘ, সমকামিতাকে অপরাধমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছিল। ভ্যাটিকান অভিযোগ করে যে পাঠ্যটি আওতার বাইরে চলে গেছে এবং এতে "যৌন অভিযোজন" এবং "লিঙ্গ পরিচয়" সম্পর্কে ভাষা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যাকে তারা একটি সমস্যামূলক বিষয় বলে মনে করেছিল। সেই সময়ে এক বিবৃতিতে, ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে দেশগুলিকে সমকামীদের বিরুদ্ধে "অন্যায় বৈষম্য" এড়াতে এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।