দুই বছরের নৃশংস যুদ্ধের অবসান ঘটাতে, ইথিওপিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার এবং টিগ্রায় কর্তৃপক্ষের মধ্যে গত নভেম্বরের শান্তি চুক্তিকে সমর্থন করতে, ইথিওপিয়ায় পৌঁছেছেন জার্মানি ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
অ্যানালেনা বেয়ারবক এবং ক্যাথরিন কোলোনা তাদের কূটনৈতিক আচারের অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদের সাথে দেখা করেছেন।
নভেম্বরের চুক্তিটি টিগ্রায় অঞ্চলে মৌলিক পরিষেবা পুনরুদ্ধার, মানবিক সাহায্য বৃদ্ধি এবং ইথিওপিয়ার ফেডারেল বাহিনীর কাছে টিগ্রায় পিপলস লিবারেশন ফ্রন্টের ভারী অস্ত্র সমর্পণের ফলে ব্যাপক অগ্রগতি দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ডিসেম্বরে টিগ্রায়ের অন্তত দুটি শহর থেকে ইরিত্রিয়া তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, তবে তারা এই অঞ্চলটি পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চায় কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ইউরোপীয় নেতারা আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) সদর দফতরে কর্মকর্তাদের সাথেও বৈঠক করবেন।
এইউ টিগ্রায় শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছে এবং তাদের পর্যবেক্ষকরা এই মাসে এর বাস্তবায়ন তদারকি করতে এই অঞ্চলে এসেছেন।
জার্মানি এবং ফ্রান্স হর্ন অফ আফ্রিকা বা আফ্রিকা শৃঙ্গে রেকর্ড পরিমাণ খরা এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধের ফলে শস্য সরবরাহে চাপ এবং খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় সহায়তা করতে চায়।
মন্ত্রীদের দু’দিনের সফরের মধ্যে রয়েছে ইথিওপিয়ার ওরোমিয়া অঞ্চলের একটি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির গুদামঘর পরিদর্শন, যেখানে ক্ষুধা মোকাবেলায় সহায়তার জন্য ইউক্রেন থেকে দান করা গম সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
জার্মান এবং ফরাসি সরকার অত্যধিক প্রয়োজনীয় শস্য সরবরাহের জন্য অর্থায়ন করেছে। এছাড়া, ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের লোকেদের জন্য তারা নতুন সহায়তা প্রদানের কথা ঘোষণা করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
বেয়ারবক বলেন, তার এই সফরের উদ্দেশ্য মূলত ইথিওপিয়াকে "মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর, স্থায়ী শান্তি এবং জবাবদিহিতার উদ্যোগকে" সমর্থন করা।
জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ সব পক্ষের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইথিওপিয়ার সরকার এবং তার মিত্ররাও অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, যদিও তারা তা অস্বীকার করে।
বেলজিয়ামের গেন্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের হিসেব মতে, ২০২০ সালের নভেম্বরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সংঘাত, ক্ষুধা, রোগ এবং অসুস্থদের যত্নের অভাবে ইথিওপিয়ায় ৩,৮৫,০০০ থেকে ৬,০০,০০০ বেসামরিক লোক মারা গেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং টিগ্রায়ের ৫০ লাখেরও বেশি লোকের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।