ইথিওপিয়ার ঐতিহাসিক শহর লালিবেলায় অর্থোডক্স ক্রিসমাস উদযাপনকারী উপাসকদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন আসমে মামো৷ তিনি বলেন, "আমি এই বছর আসতে পেরেছি কারণ এখানে এখন অপার শান্তি বিরাজ করছে।"
দুই বছরের ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে, ইথিওপিয়ার সরকার এবং টিগ্রায় বিদ্রোহীদের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দুই মাস পর, আফ্রিকার বৃহত্তম খ্রিস্টান স্থাপনাটি উত্সবের জন্য জীবন্ত হয়ে উঠেছে এবং লালিবেলায় অনুষ্ঠানের জন্য ধর্মবিশ্বাসীরা সানন্দে সমবেত হয়েছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ইথিওপিয়ার অন্যতম পবিত্র এবং ঐতিহাসিক স্থান আমহারা শহরে ভিড় অনেক কম ছিল।
টিগ্রায় থেকে লালিবেলা মাত্র ৪০ কিলোমিটারের পথ। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে সেখানে সরকারী বাহিনী এবং টিগ্রায় পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট বা টিপিএলএফ-এর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, পর্যায়ক্রমে তা প্রতিবেশী অঞ্চল গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
শহরটি যুদ্ধরত পক্ষ দুটি’র মধ্যে একটি ভয়ানক লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। যুদ্ধের সময় শহরটি চারবার হাত বদল হয়, যদিও প্রাচীন গীর্জাগুলি যুদ্ধের কলঙ্ক থেকে রক্ষা পেয়েছিল বলে মনে হয়।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক আক্রমণে টিগ্রায় বিদ্রোহীরা শহরটি দখল করে নেয়। এর ১০ দিন পর টিপিএলএফ যোদ্ধাদের হাতে ফিরে যাওয়ার আগে ১ ডিসেম্বর, ২০২১ সালে, সরকার-সমর্থক বাহিনী পুনরায় শহরটি কব্জা করে। শেষ পর্যন্ত ওই বছর ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিদ্রোহীরা টিগ্রায় দুর্গ থেকে নিজেদের বাহিনী প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেয় এবং লালিবেলা ছেড়ে চলে যায়।
গত ২ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী প্রিটোরিয়ায় উত্তর ইথিওপিয়ার বন্দুকগুলিকে নীরব করতে অকস্মাত্ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে সেখানে ধীরে ধীরে মানবিক সহায়তা পুনরুদ্ধার এবং টিগ্রায়ে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, পরিবহনের মত প্রাথমিক পরিষেবাগুলি পুনরুদ্ধারের অনুমতি দেওয়া হয়। যেগুলো এতদিন বাইরের পৃথিবী থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ছিল।
পশ্চিম টিগ্রায়ের ওলকাইট থেকে ভ্রমণ করেছিলেন আসমে। তিনি বলেন, "আমি গত বছর আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু যুদ্ধের কারণে পারিনি।" এটি একটি বিতর্কিত এলাকা, যেটি আমহারা এবং টিগ্রায়ান জাতিগোষ্ঠী উভয়ই নিজেদের বলে দাবি করেছে৷
আমহারা বংশোদ্ভূত ৩০ বছর বয়সী ওই বিজ্ঞান শিক্ষক বলেন, "আমি সত্যিই এখানে এত মানুষ আশা করিনি।"
প্রিটোরিয়া চুক্তির ফলে উত্তর ইথিওপিয়ায় যান চলাচল পুনরায় শুরু হয়, তাই আসমে তার গ্রামের অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের সাথে বাসে করে লালিবেলায় আসতে পেরেছেন।
অন্যরা আশেপাশের গ্রাম থেকে পায়ে হেঁটে, গাড়িতে করে কিংবা বিমানে রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে এসেছেন। এছাড়া ব্রিটেন, জার্মানী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি থেকেও অনেকেই এসেছিলেন।
আসমে উৎসবের পরিবেশকে "বিশেষ" বলে বর্ণনা করেছেন।
লালিবেলার প্রধান ধর্মযাজক কেনগেটা বেলায় বলেছেন, তিনি উদযাপনে লোকজনের যোগদানের সংখ্যা দেখে "অভিভূত" হয়েছেন।
তিনি বলেন, "এটাই শান্তির সুফল। কোনো ভয়-ভীতি ছাড়াই চার দিক থেকে মানুষ আসছে নির্বিঘ্নে উপাসনা করতে, তাই আজ আমার আনন্দ সীমাহীন।"
তিনি আরও বলেন, "আজ, আমি প্রত্যক্ষ করলাম, শান্তি যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান। আমার প্রার্থনা এবং আমার ইচ্ছা হল ঈশ্বর যেন আমার দেশের জন্য, নিজের জন্য এবং আমাদের সকলের জন্য স্বাধীনতা দেন।"